বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

মাদারীপুরে ২০ মৃত্যু: ৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক

নিজস্ব প্রতিবেদক | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: / ২৩ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় চালকসহ ২০ যাত্রী নিহত হয়েছেন। হাইওয়ে পুলিশ বলছেন, টানা ৩৩ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন চালক জাহিদ হাসান (৪৫)। ক্লান্ত শরীরে চোখে ঘুম নিয়ে অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর জন্য এতো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাসটি রোববার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে খাদে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় নিহত ছাড়াও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনোরকম বিশ্রাম না নিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত ছিলেন। সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে বাস চালানোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।

বাবার মরদেহ শনাক্ত করার জন্য গতকাল বিকেলে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন চালক জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান। তিনি বলেন, মাসে দুই দিন বাড়ি আসতেন বাবা। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকতেন। গত পরশু ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে গাড়ি চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি অনেক ক্লান্ত। রোববার ঢাকা থেকে এসে এক দিন বিশ্রাম নেবেন এক কথাও বলেছিলেন। কিন্তু বাবা আমাদের চিরতরে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন।

চালকদের ব্যস্ত সূচি ও বিশ্রামের ঘাটতির বিষয়ে ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোম্পানির বাস যারা চালান, তাদের বিশ্রামের জন্য প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘর রাখা আছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক জাহিদ ক্লান্ত ছিলেন, তিনি এমন কথা আমাদের কাউকে জানাননি।

পুলিশ সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে রাখা হয়। বাকি দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনের নাম-পরিচয় মিলেছে।

অন্যান্য জেলার নিহতরা হলেন- মুকসুদপুরের মো. আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া (৩৫), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আহমদ মিয়ার ছেলে শেখ আব্দুল আল মামুন (৪২), নড়াইলের লোহাগাড়ার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৬৭), ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা এলাকার শহিদ মুরাদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৮), বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ (৪৭), ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা (৫৫), আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুজ্জামান লিংকন (২৬) এবং বাগেরহাটের শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার (৩০)। বাসচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও চালকের সহকারী মো. মিরাজ।

গোপালগঞ্জের নিহত ৭ জন হলেন- গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সদরের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), সদরের মাসুম মিয়ার ছেলে মোস্তাক শেখ (৪১), টুঙ্গিপাড়ার মো. কাঞ্চন শেখের ছেলে শেখ কবির হোসেন (৫৭), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২৫), একই উপজেলার নওশাদ শেখের ছেলে সজীব (২৭), গোপিনাথপুরের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া (৫৫)।

বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *