ভারত সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জমে উঠেছে। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। প্রচারে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

লিফলেট বিতরণ ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় যোগ দিচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।

এদিকে ভোটারদের মন জয় করার পাশাপাশি কিছু প্রার্থীকে রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া এই আসনের প্রার্থীকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক ব্যক্তিকে নিজের বলয়ে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ দলটির একাধিক নেতা বলছেন, মনোনয়ন ঘোষণার দিন কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল- ঘোষিত প্রার্থীরাই চূড়ান্ত নন, এই তালিকা পরিবর্তন করা হতে পারে। এ কারণে ময়মনসিংহ-১ আসনে মনোনয়ন পেতে আরও দুজন শক্তিশালী প্রার্থী চেষ্টা করছেন। ভোটের মাঠে তারাও নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগকে নিজেদের মাঠ তৈরিতে কাজে লাগাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমনকি পিছিয়ে নেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থীরাও।

বিএনপি থেকে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত এরপর থেকেই স্থানীয়ভাবে দলটির গ্রুপিং প্রকাশ্যে আসে। এই আসনে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা সালমান ওমর রুবেলও মনোনয়ন চাইছেন। তার সমর্থকরা মাঠে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারাসহ স্থানীয় অনেকে মনে করেন, সালমান ওমর রুবেল দীর্ঘদিন ধরে জনকল্যাণমূলক কাজ করে এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছেন। বিশেষ করে করোনার সময় তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকেও মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন এমরান সালেহ প্রিন্স। দলের দুঃসময়ে তিনি নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন। তাকে সব সময় মাঠে পাওয়া যেত। সালমান ওমর রুবেলের কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জোরালোভাবে তুললেও এখন পর্যন্ত চুপচাপ দেখা যাচ্ছে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক এমপি সাংবাদিক আফজাল এইচ খানের কর্মী-সমর্থকদের। তবে দলীয় একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, বর্তমানে বিভেদ থাকলেও দল থেকে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাই তার পক্ষেই কাজ করবেন।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বসে নেই অন্য দলের প্রার্থীরাও। বিএনপির পাশাপাশি শক্ত অবস্থানে রয়েছে জামায়াত। তারা সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আসনটিতে বিএনপির নির্বাচনি কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ভোট নিজেদের বাক্সে টানার যে প্রতিযোগিতা তাতেও জামায়াত গা ভাসিয়েছে।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবির ময়মনসিংহ জেলার সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান মুক্তা, এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হালুয়াঘাট উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক আবু রায়হান ও দলটির হালুয়াঘাট উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা তাজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ইসলামী আইনজীবী পরিষদ বাংলাদেশের সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব ফারজানা রশিদ ব্রাউনিয়া। তবে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীর নাম এখনো আলোচনায় শোনা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকলেও অসংখ্য কর্মী-সমর্থক এখন চুপচাপ রয়েছেন। তাদের ভোটের দিকেও নজর রয়েছে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের। ইতোমধ্যে সভা সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্সকে বলতে শোনা গেছে- ‘আওয়ামী লীগের যারা সাধারণ নেতা-কর্মী তাদের দেখে রাখা সবার দায়িত্ব।’ তাদের কাছেও ভোট প্রত্যাশা করেন প্রিন্স। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা অন্যায়, অপরাধ, জুলুম, নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ধোবাউড়ার আলোর মিছিল সমাজ উন্নয়নমূলক সংগঠনের উপদেষ্টা ও শিক্ষক আনোয়ার হোসেন রাজিব বলেন, ‘বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতির সুফল জামায়াত নিতে চেষ্টা করবে। আগের চেয়ে জামায়াতের সমর্থক বাড়ছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালমান ওমর রুবেল এখনো মনোনয়নের আশায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধানের শীষের প্রচার চালাচ্ছেন। এলাকায় আলোচনা রয়েছে- সালমান ওমর মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। যদিও সালমান নিজে এমন কিছু এখনো বলেননি।’

বিএনপি নেতা সালমান ওমর রুবেল বলেছেন, ‘বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সময় বলা হয়েছে- এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। আমি বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি। মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনো মানুষের কল্যাণেই বিভিন্ন কাজ করছি, ভবিষ্যতেও করব। চূড়ান্ত মনোনয়ন আমাকে দেওয়া হোক। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হব।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী সময়ে দলকে গোছানোসহ সরকারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করেছি। দল সবকিছু বিবেচনা করেই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’

এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবু রায়হান বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল হচ্ছে এনসিপি। যে এলাকায় যাচ্ছি, ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

জামায়াতের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মুক্তা বলেন, ‘এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছি। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাটবাজারে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’