সংস্কার আমাদের মজ্জায়, আমাদের জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার তো আমাদের মজ্জায়, সংস্কার আমাদের রক্তে, আমাদের জন্মই তো হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, আজকে যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে , এটা আমি মনে করব যে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এটা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা সংস্কার চাই না। সংস্কার রুখে দিচ্ছি। তাহলে এর চেয়ে বড় সত্যের অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না। এইযে কমিশন হয়েছে এখন ঐকমত্য কমিশন হছে প্রত্যেকটা কমিশনের প্রতিটা মিটিংয়ে আমাদের প্রতিনিধি টিম গেছে, আমরা প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদের মতামত সংস্কার কমিটিগুলোর সামনে তুলে ধরেছি ।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ( বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে) ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫টা বছর রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তারা ভয়াবহভাবে একটা দানবীয় শাসনের শিকার হয়েছে। আমার এই দলে ১৫ বছরে ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং এই মানুষগুলো প্রতিদিন আদালতে গেছেন, উকিলের কাছে গেছেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে থেকেছেন, পুলিশের দাবরানিতে অনেকে কেউ অন্য পাড়ায় গিয়ে, অন্য গ্রামে এবং কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে, দেশ ছেড়ে, জেলা ছেড়ে, ঢাকায় এসে রিক্সা চালিয়েছে, কেউ হকারের কাজ করেছেন। কেউ বড় বড় বাড়িগুলোতে দারোয়ানের চাকরি নিয়ে থেকেছেন। এগুলো হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, প্রায় ১৭০০ বিএনপির নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছেন, দলের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেত্রী চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে ছয় বছর কারান্তরীণ রাখা গিয়েছিল। তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো সব ঘটনা সত্য।
‘বিএনপি সংস্কারে বাধা দিয়েছ’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ৭৫ সালে যখন আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ঘোষণা করে এবং পট পরিবর্তনের পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। প্রথম যে সংস্কারটি তিনি করেছিলেন তা হলো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে রুপান্তর এবং তারপরে তিনি সমস্ত বাক স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার আগে মাত্র চারটি পত্রিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সব ছিল বন্ধ।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া নয় বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচার হটিয়ে তিনি সকলকে নিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। এ একটা বিশাল মৌলিক সংস্কার। তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর মাধ্যমে যে তিনটি ইলেকশন হয়েছিল সে তিনটি ইলেকশনই ছিল সবচেয়ে ভালো ইলেকশন।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ সম্পর্কে বলা হয় জুলাই সনদের প্রথম যখন কথা উঠল, তখনই আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। গতকাল রাত্রে আবার মতামত পত্র দিয়েছি। তাহলে প্রবলেমটা কোথায়? প্রবলেমটা হচ্ছে, যে নারী দেখতে সুন্দর, তার চলন বাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন হবে কি হবে না অনেকে জানতে চেয়েছেন, কেন হবে না। নির্বাচন তো দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে । মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব সরকার চায়।
সমস্যাগুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে আমরা একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে আগাতে চাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেতে চাই। ডক্টর প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি (ইউনূস) নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখতে নির্বাচন কমিশনকে। এটা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজটা খুব দ্রুততার সঙ্গে করে তার নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপরে ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে। রপ্তানি পোশাক শিল্পের উপরে যদি ৩৫ শতাংশ ট্রারিফ আসে তাহলে পোশাক শিল্প মাটিতে শুয়ে পড়বে, উঠতে পারবে না। অর্থাৎ আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা একটা বড় সমস্যা । আমি মনে করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারা কতটুকু এ ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছেন আমি জানিনা। তবে আরো অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করাটা প্রয়োজন ছিল। তো সময় এখনো চলে যায়নি, এখনো সময় আছে । এ বিষয়গুলো আলোচনা করলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে থাকবে, আমাদের মেয়েদের কর্মসংস্থান যেন নষ্ট না হয়, আমাদের অর্থনীতি যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সে বিষয়টা তারা অবশ্যই দেখবেন ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্তে হত্যা এবং পুশইন ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি আমলে রাখার দরকার ছিল, এটা কোন হালকা ব্যাপার নয়। প্রতিদিন সীমান্তে পুশইনের মতো ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এই বিষয়টাকে আরো গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার ব্যাপারে গণমাধ্যমে নিয়ে আসার দরকার এবং এ ব্যাপারে সরকারের প্রতিও আহবান জানাবো, যেন সরকার এ বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে দরকষাকষিটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। অত্যন্ত জোরালোভাবে পানির হিস্যার ব্যাপারগুলো, পানি বণ্টনের বিষয়গুলো নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে আহবান জানান তিনি।
নিজের বয়স হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণদের উপরেই আমাদেরকে নির্ভর করতে হবে। তাদেরকেই মোটিভেট করতে হবে যেন সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করার ব্যাপারে তারা এগিয়ে আসে এবং সেখানেই তারা সফল হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে ) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই সিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালেরকণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বিএসএস এর প্রধান প্রতিবেদক দিদারুল আলম দিদার, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।