বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

৩ দলের নতুন জোট, কী বার্তা দিতে চান নেতারা?

ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: / ৫ পাঠক
প্রকাশকাল সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) তিনটি রাজনৈতিক দল নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। জোটে এনসিপির পাশাপাশি রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং এবি পার্টি। রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে তিন দলের নেতারা নতুন এ জোট গঠনের ঘোষণা দেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নতুন জোটের মুখপাত্র হিসেবে থাকছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জোট কী বার্তা দেয়, তা এখন দেখার বিষয়।
কেন এই জোট:

রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে জনমত গঠন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তিশালী করতে নতুন এ জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে সরব এমন আরও কিছু দল, সংগঠন, মোর্চা, প্ল্যাটফর্ম ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি এ জোটে যুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করা যাচ্ছে। এই জোটের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তরুণ প্রজন্মের সমর্থন—বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও নতুন ভোটার।

‘তৃতীয় শক্তি’ তৈরি হওয়া:

বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি “দুটি বড় দলে” সীমাবদ্ধ ছিল। প্রচলিত দুই বড় দল থেকে অস্বস্তি থাকা জনমনে “নতুন মুখ নতুন আশা”-র মনোভাব জোটকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। জনগণের একটি অংশ বাস্তবিকই একটি নিরপেক্ষ, দুর্নীতিবিরোধী, সংস্কারমুখী তৃতীয় বিকল্প খুঁজছে—এই জোট সেই সুযোগটা পেয়েছে।

নির্বাচনী নয়; মূলত রাজনৈতিক জোট:

‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠনের ঘোষণা অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান। যারা এতদিন সার্বভৌম, মর্যাদাবান রাষ্ট্রের পক্ষে সংস্কারের লড়াই করেছি, তারা এই জোটে ঐক্যবদ্ধ থাকব। এটি কেবল নির্বাচনী জোট নয়; মূলত একটি রাজনৈতিক জোট।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের মধ্যে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশার কথাও তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম। তার দাবি, অনেক রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিরোধিতা করছে আর সে বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতেই সংস্কারপন্থী শক্তিগুলো আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সংস্কারের পক্ষে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের দায়বদ্ধতা কতটা পূরণ হবে তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। একাত্তরের যে স্বপ্ন আজও অপূর্ণ—আমরা আশা করি ছাব্বিশের নির্বাচনে তার বাস্তবায়নের পথে এগোনো যাবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তরুণদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা নানা কারণে ব্যাহত হয়েছে। পুরোনো রাজনীতির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ ঘটেছে; বিরক্তি বেড়েছে। তাই সবাই একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি দল হাতে হাত মিলিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভুল-ত্রুটি আছে। যেসব কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা পর্যালোচনা করে আমরা নতুন অভিযাত্রা শুরু করতে চাই।

জোটের নির্বাচন পরিকল্পনা:

নির্বাচন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, জোটের সব সদস্য একই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। যদিও এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু জানান, আমাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা শেষ হলে জোটের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন—এই তিন রাজনৈতিক দল ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে একত্র হয়ে ‘তৃতীয় শক্তি’ তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের মূল আকর্ষণ নতুন প্রজন্ম, তরুণদের অংশগ্রহণ, সংস্কার ও ন্যায়ের এর প্রতিশ্রুতি এবং পুরনো রাজনীতির পুনরাবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই জোট যেহেতু নতুন, তাই তাদের প্রভাব বা সাফল্য অজানা। এর ওপর দলের অভিজ্ঞতার অভাব, রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ঘাটতি এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপনের অনেক কাজ বাকি। তবে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে ভালো কিছুর আশা করা যায়।


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর