শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিয়াদ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকালে বিদ্যালয় আঙিনায় বঙ্গবন্ধুর অস্থায়ীভেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য কোরআন থেকে তিলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ও “টুঙ্গী পাড়ার মিয়া ভাই” চিত্র নাট্যের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাত নয়টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও ১৫ আগস্টে মর্মান্তিক এবং নৃশংস হত্যা যজ্ঞে শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিদ্যালয়ে বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবোসের মিনিস্টার এস.এম. রাকিবুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স সিগনেটরী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম।
বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক খাদেমুল ইসলাম ও সিনিয়র শিক্ষিকা মিসেস সানজিদা বেগমের সঞ্চালনায় আলোচনাসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফেজ এহসানুল রাফিদ আদিব। শোকদিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরোয়া বিনতে আসিফ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন তাসনিয়া মাহবুব নওশীন। শিক্ষকমন্ডলির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা সেলিনা বেগম লীনা ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক ফেরদাউসুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন নিন্ম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণকারী সকল শহিদদের। তাঁর যোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুনিদের ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো দাবী করেন, যে সকল খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের যে কোন মূল্যে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির পূর্ণ রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হতে পারবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে মুহাম্মদ আবদুল হাকিম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের উপর আলোকপাত করেন। তিনি তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন এবং ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
প্রধান অতিথি এস.এম. রাকিবুল্লাহ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য উৎসর্গ করেন। তাঁর যোগ্য সহধর্মিনী হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার আত্মত্যাগও জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা যখন হানাদারের কারাগারে বন্দী তখন তিনি শোকের মাতম না করে স্বীয় সন্তানদের যুদ্ধে পাঠাতেও কুণ্ঠিত হননি। যাঁর অবদানে আমরা বাঙালি জাতি আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গর্বিত। সেই জাতির পিতাকে হানাদারের দোসর বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে হত্যা করে জাতির গর্বিত ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা আজ তাঁর লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্বস্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি যোগ্য স্বপ্ন প্রদর্শন বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বাঙালির জন্য এই দিনটি শোকে এবং হারানোর। আজকের দিনটি সত্যি কলঙ্কের। স্বাধীনতার মহাস্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর দিন আজ। শুধু বাঙালি জাতির কাছে নয় সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এটি একটি বিষাদের দিন আজ। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে জাতির পিতাকে তারা নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করে। বিশ্ববাসীর কাছেও এটি জঘন্যতম হত্যাকান্ড হিসেবে পরিচিত।
খুনিদের একটা অংশকে ফাঁসিতে ঝুলানোর মাধ্যমে জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আমাদের অগ্রযাত্রাকে যারা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তিনি পনের আগস্ট সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধত্তোর অনেক বিদেশি সাংবাদিক ও বিদগ্ধ ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুকে বারবার সতর্ক করেছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু মনে করতেন কোন বাঙালির পক্ষে তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তাঁর এই মহৎ বিশ্বাস মিথ্যা প্রমানিত করে হানাদারের দোসররা তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরাজিত শক্তিরা মূলত ১৯৭২ সাল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল তারা সফল হয় ১৯৭৫ সালে। থামিয়ে দেয় আমাদের অগ্রযাত্রাকে।
আমাদের সৌভাগ্য বেলজিয়ামে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যাওয়া তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতির হাল ধরেছেন। নিশ্চয় আমাদের অচিরে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সোনার বাংলা বিনির্মাণের মাধ্যমে হায়েনার উপযুক্ত শিক্ষা দিতে সক্ষম হবো।
পরে ১৫ আগস্টের সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাযাত পরিচালনা করেন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম।