শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

সর্বস্তরে বিশুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চার উদাত্ত আহ্বানের মধ্যদিয়ে রিয়াদে বাংলা স্কুলে মহান শহিদ দিবস পালন

বর্তমানকন্ঠ ডটকম, সৌদি আরব।   / ৩৫ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যে বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিয়াদ মহান শহিদ দিবস পালন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীদের জন্য একুশের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর উপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
প্রতিবছর বিদ্যালয় আঙিনায় অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে এই দিবসটি উদ্যাপিত হলেও বিশ^ আজ করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হওয়ায় এ বছর ভার্চুয়াল এক আলোচনাসভা বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদের সভাপতিত্বে রাত আটটায় অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠানের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক খাদেমুল ইসলাম ও গণিত বিভাগের প্রভাষক শামসুজ্জোহার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং এর কাউন্সেলর ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মোঃ আব্দুল হাকিম, কো-ফাইন্যান্স ডাইক্টের ইঞ্জিনিয়ার গোফরান ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হকপ্রমুখ।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এহসানুল রাফিদ আদিব এর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়তের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থী সাফা কাবির ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহিয়া জামান।
বাণী পাঠের পরে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে শিক্ষকদের পক্ষে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন সমাজ বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষিকা সানজিদা বেগম, ইংরেজি সাহিত্যের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোঃ আসিফ সাদিক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান। অভিভাবকদের পক্ষে মোঃ মোস্তাক আহম্মদ মন্ডল ও উপ-কমিটির পক্ষে মোহাম্মদ সোহাইব।

বিশেষ অতিথি জনাব সফিকুল সিরাজুল হক ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য শাহাদাত বরণকারী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের অসামান্য অবদানের জন্য সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। ইঞ্জিনিয়ার গোফরান সকল স্তরে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে প্রবাসের মাটিতেও বাংলা ভাষা চর্চা অব্যহত রাখার অনুরোধ করেন। মোঃ আবদুল হাকিম তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, শত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেও সর্বস্তরে এখনো বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত হয় নি।

প্রধান অতিথি মোঃ আসাদুজ্জমান এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, পৃথিবী থেকে ইতোমধ্যে ২৩০টি মাতৃভাষা হারিয়ে গেছে। আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীব সকল মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাতৃভাষার আন্দোলন করতে গিয়ে জাতির পিতা বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। কারাগারে বসেও তিনি আন্দোলনকারী বীর জনতাকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে মাতৃভাষার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে তোলেন। দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় উপজাতিদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
সভাপতির বক্তৃতায় মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রবাসের বুকে একখন্ড বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভূমিকা তুলে ধরেন। বিভিন্ন দুর্যোগের মতো বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিদ্যালয়টি আবর্তিত হলেও সকল জাতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় আমরা কখনো থেমে থাকি নি। সকল জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এই আঙিনায় পালন করা হয়ে থাকে। পরে তিনি ভাষা আন্দোলনের একটা রূপরেখাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। বাঙালির সামাজিক সাংস্কৃতিক চেতনার দ্বার উন্মোচনের মূলে ছিল ৫২র ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদরা বুকের তাজা রক্তদিয়ে বাংলাকে নিয়ে যায় এক অনন্য স্থানে। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সঠিক নির্দেশনায় ভাষা আন্দোলন পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে এবং সে সফল আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা ও সর্বপরি বিজয় অর্জনে সক্ষম হই। তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনসহ আমাদের মুক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট উন্মোচিত হয়।

পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *