শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮ অপরাহ্ন

ঐতিহ্যবাহী লাল চিনিতে আশার আলো

ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: / ৪৯ পাঠক
প্রকাশকাল সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকরা আখ উৎপাদন ও লাল চিনি তৈরির কাজ করেন। উপজেলায় প্রতিবছর শতকোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয়। এবারো ১০০ কোটি টাকারর বেশি লাল চিনি বিক্রির আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার মধ্যেও আখ শোধনাগার বন্ধ থাকা, উন্নত জাত, ন্যায্য দাম ও প্রণোদনা না পাওয়াসহ নানা সংকটে উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রণ আর চাহিদা বাড়ানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিস্তৃত জমিতে লাগানো হয়েছে আখ। বাতাসে দোল খাচ্ছে গাছ-পাতা। কৃষকরা আখ কেটে বাড়িতে নিচ্ছেন। এরপর আখ থেকে পাতা ছাঁটাই শেষে যন্ত্রচালিত কলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে রস। এই রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হচ্ছে চিনি। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি নির্ভেজাল এই লাল চিনি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

আখ চাষিরা জানান, মূলত জমি থেকে আখ সংগ্রহের পর তা পরিষ্কার করে যন্ত্রচালিত কলের সাহায্যে রস বের করা হয়। পরে জ্বালঘরের চুলায় সাতটি লোহার কড়াই বসিয়ে প্রথমে কাঁচা রস জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। শেষে কাঠের মুগুর দিয়ে বারবার নাড়া দিয়ে তৈরি হয় অদানা বাদামি রঙের লাল চিনি। এই উপজেলায় অন্তত ২৫০ বছর ধরে কৃষকরা প্রাকৃতিক উপায়ে লাল চিনি তৈরি করছেন। এইজনপদের মানুষের কাছে লাল চিনি বেঁচে আছে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে। সরকার উন্নত আখের বীজসহ ঋণ সুবিধা দিলে এই অঞ্চলে আখ চাষ বাড়বে।

উপজেলার পলাশতলী গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন। তিনি ১০ কাঠা জমিতে আখ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাপ-দাদাকে আখ চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতে দেখেছি। একপর্যায়ে আমিও আখ চাষ শুরু করি। লাল চিনি বিক্রি করতে গিয়ে ভালো দাম না পাওয়ায় কয়েক বছরে অনেকে আখ চাষ থেকে সরে গেছেন। তবে এবছর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক মুসলেম উদ্দিন বলেন, এবার ৮৫ শতাংশ জমিতে আখ আবাদ করেছি। চিনি ৭ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে পেরেছি। লাল চিনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুশি। তবে সরকারি উদ্যোগে উন্নত আখের জাত আমাদের দিলে আখের উৎপাদন আরও বাড়বে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বংশ পরম্পরায় এখনও টিকে আছে লাল চিনির উৎপাদন। দেশের শুধু নয়, পৃথিবীর বিরল মিহি দানার ধুলার মতো এই লাল চিনির পরিচয়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে উপজেলায় আখ চাষ হয় ৬৫০ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে লাল চিনি তৈরি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার মণ। যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। এবার আখ রোপণ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রির আশা করা যাচ্ছে। কৃষকদের আখ চাষে আরও উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল চিনিতে রয়েছে আখের সব উপাদান- শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, উপকারী অ্যামাইনোঅ্যাসিড, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিডসহ শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে লাল চিনি খাওয়া প্রয়োজন।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, লাল চিনি যদি আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে পারি তাহলে এইটা দেশের অর্থনীতিতে বড় বার্তা দিবে এবং আমরা যে কর্মাশিয়াল কৃষির কথা বলি সেটাতে রূপ দেওয়া যাবে। এই চিনি বিদেশে রফতানির সুযোগ তৈরি হলে চাষিরা লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। কৃষকরা আরও আগ্রহ সহকারে আখ চাষ করছেন। আগামী বছর থেকে আখের উৎপাদন আরো বাড়াতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আখের উন্নত জাত ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চলছে। আমরা চাই, এই উপজেলার বিখ্যাত লাল চিনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হোক। এতে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি লাল চিনির যারা ব্যবসা করবে তারাও লাভবান হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবে নির্ভেজাল চিনি।


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর