স্বাদে অনন্য নরসিংদীর লটকন, এ বছর ফলন কম

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া লটকন ফলের চাষ এ বছর বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে ফলন পরিমাণে কম হয়েছে। বাজারগুলোতে লটকনের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও স্থানীয়রা জানান, নরসিংদীর লটকনের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মানে রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ ফলটি স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে এটি বিশ্ববাজারেও সুনামের সঙ্গে রফতানি হচ্ছে।
জেলার বেলাবো উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর, ওয়ারী, বটেশ্বর, দক্ষিণ বটেশ্বর এবং শিবপুর উপজেলার জয়নগর, যোশর ও বাঘাব ইউনিয়ন, রায়পুরার মরজালে লটকনের ভলো ফলন হয়। তবে এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গাছগুলোতে ফল ধরলেও ঝরে পড়ে গিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ ফলন কম হয়েছে।
স্থানীয় বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর লটকন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। এ মৌসুমে প্রতিদিন ভোর থেকে মরজাল বাসস্ট্যান্ডে বসে লটকনের হাট। তবে ক্রেতারা জানান, বাগান ও হাটে লটকনের মূল্য প্রায় একই।
অনেকেই কখনো লটকন বাগান দেখেননি। তাই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নানা বয়সের নারী-পুরুষ বাগান দেখতে আসেন। এ সময় তারা নিজেদের জন্য ফলটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছেন রিবউল ইসলাম। তিনি মরজাল বাসস্ট্যান্ডে লটকনের ধর কষাকষি করছেন। এ সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেতরে বাগানে গিয়েছি। কিন্তু ধর বাজারের মতই। তাই এখান থেকে বড় লটকনগুলো নিচ্ছি ২২০ টাকা কেজি ধরে।
বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামের লটকন চাষি বাছেদ মাস্টার জানান, এবার পুরোনো গাছগুলোতে লটকন কম ফলেছে। তবে নতুন চারাগুলোতে অনেক ভালো ফলন দিয়েছে এবং মূল্য ভালো পাচ্ছেন তাই আবাদ কমের ক্ষতি পুষে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নরসিংদী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, এ বছর প্রায় ১৮০০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। গত ৬০ বছরে তিনবার লটকনের ফলন কম হয়েছে। বিষয়টি সরকারি কৃষি গবেষণাগারে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা।
এদিকে, কৃষি সমৃদ্ধ নরসিংদী জেলায় লটকনের আবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। উল্লেখিত গ্রামগুলোতে বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ জমিতে লটকনের গাছ ও চারা রোপণ করছেন স্থানীয়রা। এই কারণে আবাদ বেশি হলেও ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।