বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হাল চাষ

ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: / ২৬ পাঠক
প্রকাশকাল বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

দেশের কৃষিতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রসারের কারণে গরু দিয়ে হাল চাষ হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষের সেই চিত্র। কৃষকের ঘরে গরু থাকলেও হালচাষে তেমনটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। একসময় গ্রামবাংলার স্বাভাবিক চিত্র ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে এই পদ্ধতি। হাল চাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরেও একসময় কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙল ও মই। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক গরু ও লাঙল। তবে গত সোমবার হোসেনপুর উপজেলার জগদল গ্রামের এক কৃষককে গরু ও লাঙল দিয়ে ধানের বীজতলা প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।

একসময় এ উপজেলায় দেখা যেতো সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেড়িয়ে যেতো মাঠে। বামে-ডানে, হুট, হাট শব্দে গরুকে তাড়া করে চলে জমিতে হাল চাষ। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেতো তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। বাংলার গৃহবধূরা শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের কাছে। কৃষকরা মাঠে-প্রান্তরে হাল চাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো। জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার করে বীজ বপন করে সোনার ফসল ঘরে তুলে আনতো। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকতো।

সরেজমিনে হোসেনপুর উপজেলার জগদল গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও লাঙল দিয়ে একজন কৃষক জমি চাষ করছেন। তার নাম শহিদ মিয়া। তিনি জানান, হাল চাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙল-জোয়াল, মই, গরু তাড়ানোর লাঠি, গরুর মুখের টোনা লাগে। পাওয়ার টিলারে আগমনে গরু দিয়ে হাল চাষ হয় না বললেই চলে। একটু জায়গা বীজতলার জন্য চাষ করতে হবে। তাই তিনি পাউয়ার টিলার আনিনি।

তিনি আরো জানান, গরু ও লাঙল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো তেমনি ফসলও ভালো হতো। পাওয়ার টিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে।

জানা যায়,বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এই দেশের প্রায় ৮০% লোকের জীবিকা কৃষি কাজের উপর নির্ভর। তবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙল-জোয়াল, ফাল, দা, কাস্তে, খুনতি, মই, গরু ও মহিষ এখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে গরু থাকলেও লাঙল দিয়ে হাল চাষ নেই। অনেকেই তার বাপ-দাদার পেশা গরু ও লাঙল দিয়ে জমি চাষকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, উপজেলায় চরাঞ্চলে এখনো গরু আর লাঙলে জমি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। গরু আর লাঙলে জমির চাষাবাদে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর