স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী নাজমুলের যাবজ্জীবন
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় স্ত্রী হত্যার দায়ে নাজমুল হোসেন নামে এক স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক বেগম সালমা খাতুন এই দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল হোসেন কাজীপুর উপজেলার আকনাদিঘী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। আদালতের রায়ে নাজমুলের বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার পরিবারের তিন সদস্য রহিজ উদ্দিন, তার স্ত্রী মুজুয়ারা খাতুন এবং মোছা. সেলিনা খাতুন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নাজমুল হোসেন ছোটবেলা থেকেই কাজীপুর উপজেলার জাজিরা পূর্বপাড়া গ্রামে নানার বাড়িতে বড় হন। ২০২১ সালের দিকে একই গ্রামের মীম খাতুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে একই বছরের ১৩ নভেম্বর তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই নাজমুল তার স্ত্রী মীমের কাছে ১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি জানাতে থাকে। যৌতুক না পেয়ে তিনি প্রায়ই মীমকে নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
২০২২ সালের ৬ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে মীম খাতুনকে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করে নাজমুল ও তার পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর নিহতের বাবা রাসেল মিয়া বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে কাজীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত নাজমুল হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
রায়ের সময় আদালত উল্লেখ করেন, যৌতুকের দাবিতে একজন নারীর জীবন কেড়ে নেওয়া শুধু আইনবিরোধী নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। সমাজে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে যে আইন ও আদালত নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় সর্বোচ্চ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি আরো বলেন, যৌতুক নামক সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগই পারে এ ধরনের অপরাধ রোধ করতে।
নারী নির্যাতন ও যৌতুকের দাবিতে হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এখনও উদ্বেগজনকভাবে বিদ্যমান। নাজমুল হোসেনের যাবজ্জীবন দণ্ড সেই সামাজিক বাস্তবতার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিরোধের এক শক্ত বার্তা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আদালতের এই রায় নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় নতুন করে আশার আলো জ্বালিয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয়রা মত দিয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তবে তারা প্রত্যাশা করছেন, এ ধরনের রায় বাস্তবে দ্রুত কার্যকর হলে নারীর প্রতি সহিংসতা আরও কমে আসবে।







