1. azadkalam884@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  2. bartamankantho@gmail.com : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম
  3. cmisagor@gmail.com : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম
  4. khandakarshahin@gmail.com : Khandaker Shahin : Khandaker Shahin
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২২ অপরাহ্ন
১১ বছরে বর্তমানকণ্ঠ-
১১ বছর পদার্পণ উপলক্ষে বর্তমানকণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা....

করোনার চাপে মানসিক বিপর্যয়

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম
  • প্রকাশিত : শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

ডা. বতুল রহমান, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : করোনা ভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে মুষড়ে পড়েছে গোটা দুনিয়া। চারিদিকে আজ শুধুই হাহাকার, শুধু মৃত্যু, স্বজন হারানোর কান্না, অসুস্থতা, চাকরি হারানোর দুঃসহ বেদনা, কাজ না থাকা, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিবারে দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়। এমন এক সংকট তৈরি করেছে যা পুরো বিশ্বকে এক সঙ্গে স্থবির করে দিয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধের জন্য প্রায় পুরো বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন, অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ, দৈনন্দিন কাজকর্মে শুন্যতা। মানুষ ঘরবন্দী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কারোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেই। স্বাভাবিক জীবনযাপন স্তব্ধ।

এমন অবস্থায় অনেকেই মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন, মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

করোনার কারণে মানুষ বাধ্য হয়েই একে অন্যের কাছ থেকে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। যার প্রভাবে মেজাজে বার বার পরিবর্তন ঘটছে। মনটাও চূড়ান্ত পর্যায়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। এর চাপ পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যে।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে শারীরিক সংস্পর্শের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা স্পর্শ শরীরে বিভিন্ন হরমনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রয়োজনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় ও মানসিক চাপমুক্তি ঘটায়। ইতিবাচক স্পর্শে মানুষের শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন নামের হরমন নিঃসরণ বাড়ায় এবং করটিসল নিঃসরণ কমায়, যার ফলে ইতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

যদিও আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নই, তবুও করোনাকালীন মানসিক চাপ বা Mental Stress এর ফলে যে সমস্যা গুলো দেখা যাচ্ছে।

নিদ্রাহীনতাঃ –
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহামারী সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাপার মাথায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। ফলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, হার্ট বিট বেড়ে যায়। ফলে ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে যায়। আবার রাতে ঘুম ভাঙলে এইসব দুশ্চিন্তায় আর ঘুম আসে না। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হচ্ছে।

কাজে মনোযোগের অভাবঃ –
ঘরে কর্মে ব্যস্ততা না থাকলেও আমাদের মস্তিস্ক এখন করোনা ভাইরাসের দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত। তাই কাজে মনোযোগ দেয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এটা মেনে নিতে হবে যে এই সংকটের সময় কাজের দক্ষতা আগের মত থাকবে না এবং এটাই স্বাভাবিক।

স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়াঃ –
দুশ্চিন্তায়, মানসিক চাপে মন ভোলা হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। এতে মনোযোগের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কেটে যাবে।

রাগ বেড়ে যাওয়াঃ –
দীর্ঘ সময় ঘরবন্দী থাকার কারণে মানুষের সহ্য ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

কাজ না থাকার কারণে, আয়ের পথ বন্ধ হবার কারণে মেজাজ খুব অল্পতেই চড়ে যাচ্ছে।

মানসিক চাপে ৯১ ভাগ শিশু–তরুণঃ –
৯১ শতাংশ শিশু ও তরুণ মানসিক চাপ ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। করোনায় শিক্ষা ব্যাহত, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্যতা বেড়ে যাওয়ায় তারা হতাশায় ভুগছে। মহামারির সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দ পতন ঘটছে। স্কুল বন্ধের কারণে তারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ মনে করছে। নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক চর্চা বন্ধ হওয়ায় মানসিক বিকাশের বিপর্যস্ত হচ্ছে।

মানসিক চাপে স্বাস্থ্য কর্মীরাঃ –
এই করোনা মোকাবেলায় সম্মুখ যুদ্ধে যারা জীবন বাজি রেখে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, সরাসরি করোনা রোগীদের সংস্পর্শে যাচ্ছেন, উনারা প্রতি সেকেন্ডে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। রোগীদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা, নিজেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা, পরিবার থেকে দূরে থাকা, সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ সময় পার করছেন। পুরো পৃথিবীতে সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বহু সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স মারা গেছেন। এই মৃত্যুগুলো আবার নতুন করে প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মীকে মানসিক অসুস্থ করে তুলছে।

আমরা এক অচেনা-অজানা, অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। যেন গোটা মানব জাতীর অস্তিত্বের প্রশ্ন; করোনা জিতবে, না কি মানুষ জিতবে। ঘরে বসে থেকে মনে হচ্ছে প্রতিটি দিনই যেন নষ্ট হয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটাই আমাদের কাছে মারাত্মক কোন বিপর্যয়ের মতো। আবার মাথার মধ্যে ভিড় করছে নানা নেতিবাচক চিন্তা। সবচেয়ে বড় চিন্তা যে অসুস্থ হয়ে গেলে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ পাশে থাকতে পারে না। যেন অন্ধকার হয়ে আসছে পৃথিবীটা।

এ মুহূর্তে আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এত চিন্তার প্রয়োজন আছে। কারণ সার্বিক সুস্থতা মানেই শরীর ও মন দুইয়েরই সুস্থতা। শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। মানসিক স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির চিন্তাচেতনা, আবেগ- অনুভূতির সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয়, যার ফলে ঐ ব্যক্তি তার ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, পেশাগত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারেন এবং অপরের সাথে শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান করতে পারেন। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে স্ব স্ব অবস্থানে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন।

আমরা যদি মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকি তাহলে এই দুর্যোগময় মুহূর্তে প্রতি পদে পদে আমরা যে মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি তার সাথে পেরে উঠবো কি করে? আমরা তো অল্প চাপেই ভেঙ্গে পরবো। আমরা জানি কোভিড-১৯ এর কোন প্রতিষেধক নেই; নেই কোন কার্যকরি ওষুধ। এই যুদ্ধে তাই আমাদের একমাত্র অস্ত্র হল আমাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।মুলত মানসিক চাপ শরীর অভ্যন্তরের স্থিতি অবস্থাকে ব্যাহত করে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ঠিক রাখার জন্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা একান্ত প্রয়োজন।

এরজন্যে নিজেকে শক্ত রেখে ভাল ভাল চিন্তা করতে হবে। বই পড়া, বন্ধু, আত্মীয়দের সাথে ফোনে কথা বলা, সৃষ্টি মূলক কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখা এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা অনেকটাই উপকার হবে। যথেষ্ট পানীয় পান কর, পরিমিত প্রোটিন ও ফল খাওয়া উপকারে আসবে। বাচ্চাদেরও এগুলোতে উৎসাহিত করতে হবে। মনকে চিন্তামুক্ত করতে লম্বা গভীর শ্বাস এবং প্রশ্বাস নিলে উপকার হবে। প্রতিদিন হালকা শরীর চর্চা এক্ষেত্রে খুব জরুরী। শরীর ও মনে প্রসন্নতা আসবে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িযে পড়া করোনা ভাইরাসে অপরিচিত হয়ে উঠছে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। দূরে সরে যাচ্ছে একান্ত আপনজনরাও। নির্মমতায় ভরে উঠছে সমাজ। কোভিড-১৯ মোকাবিলার মতো মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় জোর দেয়ার গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এটা মোকাবিলা ব্যক্তি, সুশীল সমাজ এবং সরকার সহ যৌথ দায়িত্ব নিতে হবে। শিশুদের উপরে বিশেষ নজর দিতে হবে।

লেখিকা – জেনারেল সার্জন, আর্মড ফোর্সেস হাসপাতাল, জিজান, সৌদি আরব।




এই পাতার আরো খবর

















Bartaman Kantho © All rights reserved 2020 | Developed By

Privacy Policy

Theme Customized BY WooHostBD