ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
পড়াশুনার পাশাপাশি শখের বশে কোয়েল পাখি লালন পালন করতেন রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালি ইউনিয়নের কাঁচনা হাজিপাড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান ও তার ছোট ভাই মাহাবুল ইসলাম। মিজানুর রংপুর কারমাইকেল কলেজে মাস্টার্স করছেন এবং তার ছোট ভাই রবিউল রংপুর সরকারি কলেজ থেকে অনার্স করছেন। বর্তমানে এই খামারের আয়েই চলছে দুই ভাইয়ের পড়াশুনা।
রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের কোল ঘেষেঁ তারাগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। উপজেলা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই ইকরচালি ইউনিয়নের কাচঁচনা হাজিপাড়া গ্রামে দুই ভাইয়ের কোয়েল পাখির খামারটি।
খামারী মাহাবুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার নিজের বাড়িতে ১০ ফিট একটি ঘরে দশ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন কোয়েল পাখির খামার। এই খামার করে মাত্র ছয় মাসেই লাভবান হয়েছেন তিনি। ঘরের ভেতর কাঠ, বাঁশ ও নেট দিয়ে তিনটি ছোট খাঁচা তৈরি করেন। খাঁচা তৈরির কাজে তার খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। তিনি বাচ্চা ফোটানোর ডিম কিনেন গাইবান্দার আনমিজান ইউকিবেটর ফার্ম থেকে। সেখান থেকে তিন টাকা দরে নয়’শ টাকা দিয়ে তিন’শ ডিম ক্রয় করেন। বাচ্চা ফুটানেরা জন্য ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন মেশিন। এরপর সেই মেশিনে ফোটানো হয় কোয়েল পাখির বাচ্চা। তিন’শ ডিম থেকে দুই’শ বাচ্চা বের হয়। এর মধ্যে এক’শটি পুরুষ বাচ্চা আর এক’শটি মেয়ে বাচ্চা। মিজানুর কয়েকটি বাচ্চা রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেন। আর মেয়ে বাচ্চাগুলো দিয়ে শুরু করেন কোয়েলের খামার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
এখন মিজানুরের খামারে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোয়েল পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম দেয় প্রায় সাড়ে তিন’শ কোয়েল পাখি। প্রতিটি ডিম বিক্রি করে ২ টাকা দরে। প্রতিদিন তার খামারে কোয়েল পাখির খাবার বাবদ খরচ হয় তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা। সঞ্চয় হয় প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা পর্যন্ত।
মিজানুর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে জীব বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভতি হয়েছেন। শখের বসে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি খামার থেকে আয় করে সহযোগিতা করছেন তার পরিবারকে।
খামারি মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোয়েল পাখির খামার করে যে এভাবে এতো দ্রুত লাভবান হবো তা কখনো ভাবতেও পারিনি। শখের বসে করা আমার এই খামার থেকে আয় করে এখন আমি নিজেই পড়াশুনার খরচ চালিয়ে আমার সাংসারে সহযোগিতা করছি। আমার দেখে আরও কয়েকজন কোয়েল পাখির খামার করছে। তারা আমার কাছে মাঝেমাঝে এসে পরামর্শও নিয়ে যায়।
তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক বলেন, ‘কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস সুস্বাদু খাবার। যা মানব দেহের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। এতে যে পরিমাণ খাদ্য পুষ্টি আছে যা অন্য কোন মাংস ও ডিমে নেই। কোয়েলের মাংস ও ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম। কোয়েলের ডিম হার্ট ডিজিজ, কিডনি সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, পাকস্থলী ও ফুসফুসের নানা রোগ, স্মৃতিশক্তি রক্ষা, রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া, উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে সহযোগিতা করে। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম মানুষের কিডনি, লিভার ও হ্দপিন্ডের কার্য ক্ষমতা উন্নত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।’
তিনি বলেন, ‘কোয়েল পাখির খামার লাভজনক। এ খামার করতে তেমন খরচ হয় না। অল্প পুঁজিতে এই খামার করে অল্প দিনের মধ্যেই লাভবান হওয়া যায়।’