আন্তর্জাতিক ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭: বিজ্ঞানীরা সিলিকনের সাহায্যে নতুন একটি ওয়াটার স্প্লিটার বা পানি বিদারক ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন, যা বানাতে তেমন খরচ পড়বে না, আবার ডিভাইসটি ক্ষয়ও হবে না। আর এ ডিভাইসের সাহায্যে পানি ভেঙে অক্সিজেন অবমুক্ত করা হয় আর হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসাবে জমা করা হয়। এটাই ক্লিন হাইড্রোজেন বা বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এ ক্লিন হাইড্রোজন উদ্ভাবন করেছেন। আলোর সাহায্যে পানি বিশ্লিষ্ট করে জ্বলতে সহায়ক এ ক্লিন হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়।
পানি বিদারক যন্ত্রটি মূলত সিলিকনের সেমিকন্ডাক্টর, যার ওপর রয়েছে নিকেলের অতি পাতলা প্রলেপ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, সূর্যকিরণ থেকে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন জ্বালানি সংগ্রহের পথ খুলে দেবে।
স্ট্যানফোর্ড বিজ্ঞানীদের আসল টার্গেট হচ্ছে সোলার প্যানেলে হাইড্রোজেনচালিত ফুয়েল সেলও অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। সূর্য যখন কিরণ ছড়াবে না বা যখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে, তখন হাইড্রোজেনচালিত ফুয়েল সেল ব্যবহার করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে এ গবেষণা প্রকল্পের অন্যতম সদস্য স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হুংজি দাই বলেন, ‘সূর্য যখন কিরণ ঢালে, শুধু তখনই সোলার প্যানেল কাজ করে। আর সূর্যের কিরণ না থাকলে বিদ্যুতের প্রথাগত উৎসের উপর ভোক্তাদের নির্ভর করতে হয়। এটার বিকল্প হতে পারে হাইড্রোজেনচালিত সেল। রাতে অথবা ব্যাপক চাহিদাকালে ক্লিন হাইড্রোজেনই সমাধান উপহার দেবে এবং এটা পরিবেশবান্ধব সমাধান।’
এ প্রক্রিয়ায় দুটি সেমিকন্ডাক্টিং ইলেকট্রোড যুক্ত করে পানিতে স্থাপন করা হয়। ইলেকট্রোড দুটি আলো শোষণ করে নেয় এবং তার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তি পানিকে তার মৌল উপাদান অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে ভাগ করে ফেলে। এ সময় অক্সিজেনকে বায়ুতে ছেড়ে দেওয়া হলেও হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের জন্য মজুদ করা হয়। কিন্তু যখন বিদ্যুতের দরকার হবে, তখন কনডেন্সারে জমা বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে ফুয়েল সেলে বিদ্যুতের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানিও উৎপন্ন করবে।
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পুরো প্রক্রিয়াটিই পরিবেশবান্ধব। এখান থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো গ্যাস নির্গত হবে না।
তারা এটাও বলছেন, কত কম খরচে পানি বিদারক ডিভাইস তৈরি করা যায়, তা নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। বর্তমানে সিলিকন ইলেকট্রোডে নিকেলের প্রলেপ থাকলেও তা টানা ৮০ ঘণ্টা পর দ্রবণে গলে যায়। সিলিকন ইলেকট্রোডকে দ্রবণে গলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আরও গবেষণা জরুরি।
তারা বলছেন, সিলিকনের দাম খুব বেশি নয়। তবে আরও কম দামি ও সহজে পাওয়া যায়- এমন কোনো ধাতু ইলেকট্রোড হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব কিনা, তাও গবেষণা করে দেখতে হবে।
অধ্যাপক হুংজি দাই বলেন, ‘বিজ্ঞানী থমাস এডিশন বলেছিলেন, উন্নত মানের নিকেল ব্যাটারি পেতে হলে ইলেকট্রোলাইটসে লিথিয়াম ধাতু যোগ করতে হবে। অনেক বছর পর আমরা শুধু তার কথার সত্যতাই খুঁজে পেলাম না, পানিকে তার মৌল উপাদানে ভেঙে ফেলার একটি উন্নততর ডিভাইসও পেয়ে গেলাম।’