শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

ক্ষোভ আর বিদ্বেষের মাত্রা কতটুকু হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ০ Views পাঠক
বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

সমর্থক ভেবে হাত মেলাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই ব্যক্তি সোজা চড় বসিয়ে দেবে গালে তা কল্পনাও করেননি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যখন হামলাকারীকে চেপে ধরছিল তখনও সে স্লোগান দিচ্ছিল ‘ম্যাঁক্রোবাদ নিপাত যাক।’ ক্ষোভ আর বিদ্বেষের মাত্রা কতটুকু হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। কিন্তু ফরাসি প্রেসিডেন্টের ওপর জনগণের এতো ক্ষোভ কেন?

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ১৮ মাসের মাথায় ম্যাঁক্রোর বিরুদ্ধে প্রথম বড় আকারের বিক্ষোভ হয়। জীবনযাত্রার নিম্নমানম দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, ওভার টাইম এবং পেনশনের উপর কর বসানোর সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত ফুঁসছিল। এর মধ্যে ঘিতে আগুন দেওয়া হয় জ্বালানি তেলের ওপর পরিবেশ কর আরোপ করে। এর প্রতিবাদে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইয়েলো ভেস্ট বা ‘হলুদ জ্যাকেট’ আন্দোলন শুরু হয়। প্রতিবাদ–বিক্ষোভে ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহৃত হলুদ জ্যাকেট পরে প্রতিবাদকারীরা অংশ নেওয়ায় এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বা ‘হলুদ জ্যাকেট’ আন্দোলন। রাজধানী প্যারিস থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর ৪ ডিসেম্বর জ্বালানির ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে ব্যাপক ভাঙচুর, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়। ওই দিন ম্যাঁক্রোকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ কমেনি।

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে অর্থনীতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেন ম্যাঁক্রো। ভুল অর্থনৈতিক নীতির জন্য ফরাসি অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। গত বছর দেশে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ৭৮ ভাগ ফরাসি মনে করে প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোর আমলে ফ্রান্স পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ধনী শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে ম্যাঁক্রো যে অতিরিক্ত কর আরোপ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন এবং ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধানকে বাড়িয়ে তুলছেন বিরোধীরা সেটিকে বলছে ‘ম্যাঁক্রোইজম’। মূলত এই ম্যাক্রোইজমের বিরুদ্ধেই জনগণের যতো ক্ষোভ। মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট চড় মারার সময় হামলাকারী সেই ‘ম্যাঁক্রোবাদ নিপাত’ যাওয়ার স্লোগানই দিয়েছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই পাতার আওর সংবাদ