শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

দেহে প্রাণ থাকতে কবর দেওয়া হয়েছিল রোহিঙ্গাদের

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ০ Views পাঠক
শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,শুক্রবার,০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ : একসঙ্গে তাদেরকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। বসে বসে তারা বৌদ্ধ প্রতিবেশীদের অগভীর কবর খোঁড়া দেখছিলেন। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সেই ১০ রোহিঙ্গাকে সেই কবরেই মাটিচাপা দেওয়া হলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ইন দিন গ্রামে। গণকবরটিতে যখন মাটি ফেলা হচ্ছিল তখনও দেহে প্রাণ ছিল কয়েকজনের।

ওই গণকবর খুঁড়েছিল এবং হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন ইন দিন গ্রামের এমন বৃদ্ধ ও আধাসামরিক বাহিনীর কয়েকজনের সদস্যের বরাত দিয়ে শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এই তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়েই গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তারের শিকার হন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক।

ইন দিন গ্রামে সেই দিন কবর খুঁড়তে সাহায্য করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ৫৫ বছরের সোয়ে চে। রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, দুজনকে গ্রামবাসী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। বাকীদের গুলি করে হত্যা করে সেনারা। প্রত্যেককে দুই থেকে তিনবার গুলি করা হয়।

তিনি বলেন, ‘১০ জনের জন্য একটি কবর। তাদেরকে যখন কবর দেওয়া হচ্ছিল, তখনও কয়েকজনের দেহ থেকে শব্দ বের হচ্ছিল। অন্যরা ততক্ষণে মারা গেছে।’

এতোদিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে খবর বের হয়েছে। প্রথমবারের মতো রয়টার্স সেসব গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের সংবাদ পরিবেশন করেছে যারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের হত্যা করেছে ও মৃতদেহ মাটিচাপা দিয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় গ্রাম ইন দিনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও এতে সেনা সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে মিয়ানমারের আধা-সামারিক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। বিবরণ অনুযায়ী, গ্রামটি থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে সেনা সদস্যরা।

ইন দিনে নিহত ওই ১০ ব্যক্তির ছবি দেখে তাদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া স্বজনরা। তারা জানিয়েছে, এদের মধ্যে দুই কিশোর শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যরা পেশায় জেলে, মুদি দোকানি ও ধর্মীয় শিক্ষাগুরু।

নিহত ১০ জনের তিনটি ছবি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সরবরাহ করেছে গ্রামটির এক জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ। ১ সেপ্টেম্বর ধারণ করা প্রথম ছবিটিতে দেখা গেছে, ১০ বন্দীকে এক সারিতে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরের দিন ধারণ করা দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা গেছে, সকাল ১০টার কিছু পরে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তৃতীয় ও শেষ ছবিটিতে দেখা গেছে, নিহতের লাশ স্তুপের মতো অগভীর কবরটিতে পড়ে আছে।

গত মাসে প্রথমবারের মতো ইন দিন গ্রামের গণকবরের খবরটি প্রকাশ করে রয়টার্স। পরে ১০ জানুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে দাবি করে, ওই ১০ রোহিঙ্গা ইন দিন গ্রামে হামলা চালিয়েছিল। গ্রামবাসী তাদের ওপর তলোয়ার নিয়ে পাল্টা হামলা চালায় । গ্রামবাসীদের হামলায় কয়েকজন নিহত হয়। অন্যরা সেনাদের গুলিতে নিহত হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। প্রাণে বাঁচতে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই পাতার আওর সংবাদ