নিউজ ডেস্ক | বর্তমানকন্ঠ ডটকম:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপত্তা দাবী করেছেন। ডিআইজি মিজানুর সম্পর্কে তিনি বলেন, সে একজন নারী নির্যাতনকারী এবং হিংস্র স্বভাবের লোক। তার অনুকুলে প্রতিবেদন না দেওয়ায় সে আমার উপর ক্ষিপ্ত।
আজ সোমবার (১০ জুন) বিকেলে বার্তাসংস্থা দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের নিরাপত্তা দাবী করে বলেন, ডিআইজি মিজানুর খুবই হিংস্র প্রকৃতির মানুষ। তিনি মিজানুরের অভিযোগকে বানোয়াট ও ডিজিটাল জালিয়াতি আখ্যায়িত করে বলেছেন, যে লোক এমন একটা জালিয়াতি করতে পেরেছে, সে আরো বড় জালিয়াতিও করতে পারে। শারীরিক নির্যাতন করতে পারে বা পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতে পারে।
উল্লেখ্য, নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালক এনামুলের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি করে দুদক। সোমবার (১০ জুন) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, ডিআইজি মিজানের দুর্নীতি তদন্তে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশের বিতর্কিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করা হয়নি বলেও জানান দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘কমিশনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও তথ্য পাচারের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।’
এদিকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন খন্দকার এনামুল বাছির। তিনি দাবী করেন, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। তিনি আরো বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন, তা না হলে প্রভাবশালী মহল থেকে বলা হতো, পদে থেকে আমি তদন্ত প্রভাবিত করছি। এটা বরং আমার জন্য ভালই হয়েছে। দুদকের তদন্ত নিয়ে এখন কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, দুদক কর্তপক্ষের সাথে তার আগেও প্রমোশন নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। তবে তা তদন্তে কোন প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, দুদকের বর্তমান সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কোন বক্তব্য নাই। তারা যেটা সঠিক মনে করবেন তাই তিনি মেনে নিবেন। কারণ, এটাই প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেম। প্রতিষ্ঠানের কারো বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ ওঠে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হয় সেটা খতিয়ে দেখা। এটার মধ্যে আমি দোষের কিছু দেখি না। আমাকে যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, আমি মনে করি এটাও সঠিক।
তিনি দাবী করেন, ডিআইজি মিজান যে অডিও ফাঁস করেছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আমার মোবাইল পরীক্ষা করে দেখা হোক, সে আমার সাথে কথা বলেছে কিনা।
এনামুল ডিআইজি মিজানের দোকানে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, দোকানে তো আমি কারো সাথে খোশ গল্প করতে যাইনি। আমি গিয়েছিলাম দোকানের মালামালের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য, কোথায় কি আছে তা খতিয়ে দেখতে। সে বলেছে, দোকানে ৭০/৮০ লাখ টাকার মালামাল আছে। সেখানে এত টাকার মালামাল থাকতে পারে কিনা তা দেখতেই গিয়েছিলাম। বাকি যে ছবিগুলো, সেগুলো ছিলো ডিজিটাল অপরাধ। আমার স্ত্রীর ফেসবুক আইডি থেকে ছবি ক্রপ ও ক্লোন করে সে এসব ছবি তৈরি করেছে। যে এ ধরনের জালিয়াতি করতে পারে, সে আরো বড় ধরনের অপরাধ করতে পারে। তাই আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে আমাকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে পারে বা পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করতে পারে। তাই আমি সরকারের কাছে নিজের নিরাপত্তা দাবী করছি।
তবে যত বাধাই আসুক, তিনি ভীত নন বলে দাবী করেন এনামুল। তিনি বলেন, বড় ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ করতে গেলে এরকম বাধার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে তিনি পিবিএ’কে আরো বলেন, এর আগেও একটা বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে যেয়ে আমার ৪০ মাস চাকরি ছিল না। এখনো এমন একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করার কারণে আমাকে কিছুদিন হয়রানি করা হবে। এটা আমার প্রফেশনের অংশ বলেই আমি মনে করি, প্রফেশনালি আমি এটা মেনে নিয়েছি।
খবর-পিবিএ