নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭: বিপিএল জুড়েই ছিল শত শত কোটি টাকার বাজি। পল্লী এলাকার চায়ের স্টল থেকে শুরু করে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের লবি পর্যন্ত ছিল বাজির প্রভাব। বাজিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
এছাড়াও দেশি-বিদেশি ৭০ জুয়াড়িকে বিসিবি চিহ্নিত করে আটকের ঘটনা ঘটে। টি-২০ এই আসরকে সারা দেশে প্রতি ম্যাচে প্রায় শত কোটি টাকার বাজি চলে। আর ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে এ উন্মাদনা আরো বেশি। বাজিকরদের মতে অন্যান্য ম্যাচে সারা দেশে শত কোটি টাকা হলেও শুধু ফাইনাল ম্যাচে এ হার কয়েকগুণ বেশি।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা মনিটরিং করেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে আটকও করা যায় না।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইউসুফ আলী বলেন, বিপিএলে জুয়া হয় এটা আমরা জানি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। এ কারণে তারা গ্রেপ্তারের বাইরে থাকে।
বিপিএলে জুয়া : টি-২০ আসরের সবচেয়ে বেশি জুয়া হয় আইপিএলকে ঘিরে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ওই আসরে ক্রিকেট বিশ্বে জুয়া হয়। এটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। ওই আসলে জুয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় জাতীয় দলের সাবেক ফাস্ট বলার শ্রীসান্ত এখনো বহিষ্কারে রয়েছেন। শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার।
আমাদের দেশের ক্রিকেটও এর কবল থেকে মুক্তি পায়নি। জুয়াড়িদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে আশরাফুলের মতো ক্রিকেটার ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। তবে এরপর থেকে বিপিএল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে আরো সাবধান হলেও বাজি থেমে থাকেনি।
ক্রিকেটারদের টোপে ফেলতে না পারলেও ম্যাচ বাই ম্যাচ বাজি হয়। এ বাজির পরিমাণ কখনো দলের পক্ষে যে পরিমাণ বাজি তার কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টি-২০ এ আসরের টস থেকে শুরু করে বল টু-বল পর্যন্ত বাজি চলে। টসে কোন দল জয়লাভ করবে এ নিয়ে শুরু হয় বাজি। এরপর ওভারের রান, বল টু বল রান, এমনকি উইকেট নিয়েও বাজি চলে। দলের জয়লাভে গিয়ে বাজি শেষ হয়। এক্ষেত্রে হেড টু হেডও বাজি চলে।
এ বাজি যে শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক তা নয়, নিভৃত গ্রামের পল্লী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীতে বড় পাঁচ তারকা হোটেলে এক একটি দলের পক্ষে কোটি টাকা পর্যন্ত বাজি চলে। এছাড়াও পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানেও এ বাজি চলে। আর ক্লাবের ক্ষেত্রে তো কোনো কথাই নেই। একেবারে টাকা জমা নিয়ে সেখানে জুয়া চলে। বল টু বল, ওভার টু ওভার অনেকটাই প্রকাশ্যই এ জুয়া।
শতকোটির বাজি : রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাজিকর আলমাস রহমান বেশ পরিচিত নাম। তিনি জানান, শুধুমাত্র ঢাকায় বিপিএলজুড়ে প্রতি ম্যাচে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো জুয়া হয়।আর যদি সারা দেশ ধরেন তবে অবশ্যই শতকোটি টাকা ছড়াবে।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গুলশান বনানীর হোটেলে পর্যন্ত যান তবে এ সংখ্যা বেশির চাইতে কম হবে না।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএল শুরু থেকে প্রতি ম্যাচে এ অবস্থা চললেও ফাইনালকে ঘিরে এর চেহারা পুরোটাই পাল্টে গেছে। ফাইনালকে ঘিরে শুধু ঢাকায় শতকোটির বাজি বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এর বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশির আনাচে-কানাচে এর প্রভাব পড়ে।
খুন : রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বিপিএলে জুয়াকে কেন্দ্র করে গত ৬ নভেম্বর মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাসিম নামের এক শিক্ষার্থী ছুরিকাহতে খুন হন। নাসিম মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী ছিলেন। বলে জানা গেছে।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, জুয়া বা বাজিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
আটক ৭৭ : বাড্ডায় জুয়া নিয়ে খুনের ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। তারা, খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, শুধুমাত্র মাঠের বাইরেই নয়, মাঠের মধ্যে গ্যালারিতে বসেই ক্রিকেট জুয়ায় মেতে উঠেছে একটি চক্র। তাদের ধরতেই মূলত বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট মাঠে নেমে পড়ে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে হয়তো তাদের ধরা কঠিন। তবে বিসিবি আড়ি পেতে হোক আর যে ভাবেই হোক, মাঠ থেকেই মোট ৭৭ জন জুয়াড়িকে আটক করতে সক্ষম হয়।
বিসিবি কর্মকর্তা ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানান, ৭৭ জন আটককৃত জুয়াড়ির মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন মোট ৬৫ জন। এছাড়া বিদেশি রয়েছেন ১২ জন। বিদেশিদের মধ্যে ১০ জনই ভারতীয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৫ বাংলাদেশিকে মাঠে বসে অনলাইনে জুয়া খেলার সময় আটক করেছি। যেহেতু আমরা পুলিশ কেস করতে পারি না, তাই তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। ৬৫ বাংলাদেশি ছাড়াও বিদেশি ছিল ১২ জন। যার মধ্যে ভারতীয়ই ছিল ১০ জন।’
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, এ সকল জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করা কঠিন। আর জুয়ার বিষয়ে আমাদের আইনও তত কঠিন নয়। বিপিএলে জুয়ার বিষয়টি সবাই জানলেও ওইভাবে আটকের বিষয়টি আমাদের নির্দেশ না ছিল না।
তবে অবশ্যই আমরা বড় ধরনের বাজি বা কোনো চক্র যেন বেটিং না করতে পারে সে ব্যাপারে তো আমাদের মনিটরিং ছিল, জানান যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।