নিউজ ডেস্ক | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সাধারণ একটি বিজ্ঞাপন। সে সব বিজ্ঞাপনে যা থাকে এই বিজ্ঞাপনেও আছে একই জিনিস। বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি ওয়েবসাইটও আছে। তাতে কিছু ছবি দেওয়া আছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ক্লাস রুমে বসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। লাইব্রেরিরও কিছু ছবি আছে, যেখানে বসে আছে ছাত্রছাত্রীরা। আছে ক্যাম্পাসের ছবি। সবুজ মাঠের ওপর বসে শিক্ষার্থীরা আড্ডা মারছে।
সবকিছু ঠিকঠাক। দেখে মনে হবে আর ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এটিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আসলে তা নয়। ওয়েবসাইটে ক্লাস রুম, লাইব্রেরি আর ক্যাম্পাসের ছবি থাকলেও বাস্তবে সে রকম কিছু নেই। এটি আসলে একটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। নাম ইউনিভার্সিটি অব ফার্মিংটন। কাল্পনিক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মিশিগান অঙ্গরাজ্যে।
কাগজে-কলমে আর ইন্টারনেটে এটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তর বা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। এর পেছনে কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অভিবাসীদের আকৃষ্ট করে তাদের আটক করা। গত রোববার বিবিসি বাংলা এই ভুয়া বিশ^বিদ্যালয়ের খবরটি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অভিবাসীরা যে অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে পারে এই অভিবাসন জালিয়াতি ধরাই ছিল তাদের এই নাটকের লক্ষ্য। এতে সফলও হয়েছে তারা। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সাজানো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁদে পা দিয়ে ধরা পড়েছে বহু ভারতীয় তরুণ।
জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মোট ১৩০ জনকে গত বুধবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং তাদের মধ্যে ১২৯ জনই ভারতীয়।
এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত সরকার। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
গত শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের কাছে এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও তাতে উদ্বেগ জানিয়ে গ্রেপ্তারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুমতি বা কনস্যুলার এক্সেস দাবি করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এসব শিক্ষার্থীর মর্যাদা ও তারা কেমন আছে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ কারণে খুব দ্রুত তাদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করতে দেওয়া উচিত।’
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন তারা জানতেন যে এখান থেকে তারা যেসব সুবিধা নিচ্ছিলেন সেগুলো অবৈধ।
ভুয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তৈরি করা হয় ২০১৫ সালে। উদ্দেশ্য ছিল যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী স্টুডেন্টস ভিসা নিয়ে আগেই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন কিন্তু ওই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও নানাভাবে দেশটিতে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের ফাঁদে ফেলা।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত দুই বছরে অবৈধ এসব অভিবাসী এবং যারা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন তাদের পাকড়াও করতে কর্তৃপক্ষের অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।