ডাঃ ইসমত কবীর, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, যুক্তরাজ্য : কোভিড১৯ এর নীরিক্ষাধীন টীকার সংখ্যা এখন দু’শো। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এ আছে দশটা (যুক্তরাজ্যে একটা, যুক্তরাষ্ট্র চারটা আর চীনে পাঁচটা)
ভ্যাক্সিন গবেষণার তিন দিকপাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আর চীন এ তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে শিগগীরই।
মিউটেশন নিয়ে নেই কনফিউশন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী ডঃ সৌম্য সামীনাথান জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের রূপান্তরগুলো টীকার কার্যকারিতায় কোন প্রভাব ফেলবে না। নীরিক্ষাধীন সবগুলো টীকাই তৈরী হচ্ছে ভাইরাসের মূল অস্ত্র স্পাইক বা কাঁটার প্রোটিনকে কেন্দ্র করে আর এ অংশে কোন রূপান্তর আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তাই ‘মিউটেশন’ নিয়ে আর ভ্যাক্সিন অকার্যকর হওয়ার ‘কনফিউশন’ও এখন থাকলো না।
(ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মিউটেশন এর জন্য বছর বছর নতুন টীকা তৈরী করতে হয় তারপরও এর কার্যকারিতা মাত্র ৪০% থেকে ৬০%)
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও অস্ট্রাজেনেকা
সাড়া জাগানো প্রফেসর সারা গিলবার্ট এর ভ্যাক্সিন এর নাম ছিল ChAdOx1 nCov-19. এখন এটা হয়েছে খ্যাতনামা ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রাজেনেকা’র AZD 1222
বিয়াল্লিশ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে AZD 1222 এর ফেজ থ্রি বা তৃতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এতে যুক্ত হবেন যুক্তরাজ্যের দশ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিশহাজার আর ব্রাজিলের দু’হাজার জন। চূড়ান্ত পর্বের এ ট্রায়ালে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের স্বেচ্ছাসেবী থাকছেন।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর পর পরই ব্যবহারে যাতে কোন দেরী না হয় তাই এরিমধ্যে এটাকে বিপুল পরিমাণে প্রস্তুত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে অস্ট্রাজেনেকা। চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ত্রিশ কোটি আর যুক্তরাজ্যের জন্য দশ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে বলে। আগামী এক বছরের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে একশ কোটি ডোজ।
যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন তূরন্ত গতি
(Operation Warp Speed)
অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে কার্যকর ভ্যাক্সিন হাতে পাওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার হাতে নিয়েছেন হাজার কোটি ডলার এর প্রকল্প – অপারেশন ‘ওয়ার্প স্পিড’ বা তূরন্ত গতি। সরকারী সংস্থাগুলো ছাড়াও এ প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে আছে পাঁচটি নামী ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, মডারনা, অস্ট্রাজেনেকা, জনসন এন্ড জনসন, মার্ক এবং সানোফি।
২০২১ এর জানুয়ারিতে কার্যকর টীকাগুলোর অন্তত বিশ কোটি ডোজ হাতে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এন্টনি ফসি সাহেবের।
মডারনার এমআরএনএ (mRNA 1273)
অগ্রসর প্রযুক্তির টীকাটি নিয়ে সফলতার সাথে দ্বিতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মডারনা। দ্বিতীয় পর্বে মামুলি জ্বর, হাতে ব্যথা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি কারো মধ্যে। জুলাই ২০২০ এ ত্রিশ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত পর্ব। ট্রায়াল এর জন্য এরি মধ্যে মিলেছে এফডি এর ছাড়পত্র।
জনসন এন্ড জনসন প্রতিষ্ঠানটিও তাঁদের টীকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে জুলাই এ।
চীন এর ‘সিনোভ্যাক বায়োটেক’ এর করোনাভ্যাক
চীনে চারটা ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে ‘সিনোভ্যাক বায়োটেক’ এর ‘করোনাভ্যাক’ তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরু করেছে। এ ট্রায়ালে জুলাই থেকে অংশ নেবেন ব্রাজিলের নয় হাজার স্বেচ্ছাসেবী। সাও পাওলোতে তৈরী হবে ভ্যাক্সিনটি ‘সিনোভ্যাক’ এর তদারকিতে। ট্রায়ালটি সফল হলে এক বছরে অন্তত দশকোটি ডোজ প্রস্তুত করার সক্ষমতা আছে সিনোভ্যাকের।
চীনের অপর এক প্রতিষ্ঠান ‘ক্যানসিনো’ ১০৮ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর প্রয়োগ করা ভ্যাক্সিন Ad5 nCov নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর ফল প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। ‘ল্যানসেট’ এ প্রকাশিত এ প্রবন্ধে জানানো হয়েছে, এ টীকায় পেশীতে ব্যথা ও জ্বর ছাড়া কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইরাস নিষ্ক্রিয়করণ এন্টিবডি তৈরি হয়েছে বলেও দাবী করা হয়েছে প্রবন্ধটিতে।
সেপ্টেম্বর এর মধ্যেই কি আসবে সুখবর?
লেখক : জেরিয়াট্রিক ও জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজিস্ট্রার, কুইন এলিজাবেথ দা কুইন মাদার হসপিটাল, মারগেট, কেন্ট, যুক্তরাজ্য।