ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
নানা শঙ্ক ও আশঙ্কার মধ্যেও শান্তিপূর্ণভাবে টঙ্গীর তুরাগ তীরে দ্বিতীয় পর্বের (সাদ অনুসারীদের পর্ব) বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি ও কল্যাণ কামনায় এ মোনাজাতে অংশ নেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়, শেষ হয় দুপুর ১২টায়। মোনাজাত পরিচালনা করছেন সাদ অনুসারীদের মুরব্বি দিল্লির মাওলানা শামীম আহমদ।
এর মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ উপমহাদেশের মুসলমানদের বৃহত্তম মাহফিল এবারের ৫ দিনের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হয় হলো। এদিন আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ভোর থেকেই লাখো মুসল্লি হেঁটে, ট্রেনে, ট্রাক-বাস-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চল থেকে ইজতেমা ময়দানে সমবেত হন।
সোমবার আখেরি মোনাজাত হওয়ার কথা থাকলেও সাদপন্থি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একদিন বাড়ানো হয়। সোমবার বাদ ফজর থেকেই ইজতেমা ময়দানে শুরু হয় ধর্মীয় বয়ান। বাদ ফজর বয়ান করেন দিল্লির হজরত মাওলানা মুরসালিন। বাংলায় তরজমা করে শোনান বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর। জোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা শাহজাত, বাংলাদেশের মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মাওলানা শওকত হোসাইন বয়ান করেন।
ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে নিয়ে বিভক্ত দাওয়াতে তাবলিগ। একাধিকবার তারা পরস্পর সংঘাতেও জড়িয়েছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। দুই পক্ষই পরস্পরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ফলে এবারের ইজতেমা নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে নানা শঙ্কা ছিল।
গত ১১-১৩ এবং ১৮-২০ জানুয়ারি ইজতেমার কথা থাকলেও তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষের আপত্তিতে ইজতেমা বাতিল করা হয়। পরে সরকারের মধ্যস্থায় তাদের উপয় পক্ষের সম্মতিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এক সঙ্গে দুই পর্ব শুরু হয়। ইজতেমা ময়দানে বয়ান ও আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত এ ইজতেমাও দুই ধাপে আলাদা আলাদা বয়ান ও মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রথম দু’দিন অর্থাৎ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মো. যুবায়েরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। পরবর্তী দু’দিন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি (বাড়তি ১৯ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালিত হয় সা’দপন্থি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে।
এদিকে প্রশাসন দুই পক্ষের সাথেই সমন্বয় করে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নেয়। ইজতেমা মাঠ ঘিরে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল প্রশাসন। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা রক্ষায় সক্রিয় ছিলেন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মোতায়েনের কথাও জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়া সেটা প্রয়োজন হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মানুষের দুর্ভোগ সংকট কাটাতে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে ভাগ করে আয়োজন করা হয়।