নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার,১৯ ডিসেম্বর ২০১৭: ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা দুটিতে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে সরব হয়ে উঠছেন সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা। দীর্ঘ আট মাস যাবত বন্ধ হয়ে আছে কারখানা দুটি। আর এই খাত থেকে একদিকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে শ্রমিক-কর্মচারীরা অভাব-অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শ্রমিক-কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, আট মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় দুটি কারখানায় এ পর্যন্ত ৮৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, ঘোড়াশাল সার কারখানাটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা। আর পলাশ ইউরিয়া সার কারখানাটি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে চীন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে কারখানাটি একের পর এক বাধার সম্মুখীন হয়।
শ্রমিক-কর্মচাৃরীদের দাবি, ঘোড়াশাল সার কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪২২ টন ও পলাশ সার কারখানার ৩০০ টন। উৎপাদন বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন খাতে ঘোড়াশাল সার কারখানার ক্ষতি ৭৩০ কোটি এবং পলাশ সার কারখানার ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। দুই কারখানায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ৮৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় প্রায় সাড়ে সাতশ’ ও পলাশে সাতশ’র মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। প্রতি মাসে কারখানাটির কর্মীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু গত আট মাস যাবত বেতন না পাওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের সংসার অচল হয়ে পড়ছে বলে জানান শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি। আর উৎপাদন বন্ধের কারণে বিদেশ থেকে সার আমদানি করায় বিরাট অঙ্কের লোকসান গুনছে সরকার।
কারখানাগুলোয় এক টন সার উৎপাদন করতে খরচ হয় মাত্র ১৪ হাজার টাকা। অথচ কারখানা বন্ধ থাকলে এক টন সার বিদেশ থেকে আমদানি করতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। কারখানা দুটি চালু থাকলে একদিকে যেমন সরকারের ভর্তুকি দিতে হয় না, অন্যদিকে কেমিক্যাল প্লান্টগুলো নষ্টের হাত থেকে বেঁচে যায়।
শ্রমিকদের দাবি, একটি কুচক্রী মহল দেশের শিল্পকে ধ্বংস করতে কারখানা দুটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। শুধু তা-ই নয়, একশ্রেণির অসাধু সার ব্যবসায়ী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চক্রটিকে মদত জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে আগাম কোনো নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ সার কারখানা দুটি বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে জানান তারা।
সার কারখানা সূত্রে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গত ১৭ এপ্রিল থেকে ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। গত গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার এনে এই কারখানার আওতাধীন এলাকাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। অবশ্য ২০১০ সাল থেকে শুধু গ্রীষ্ম মৌসুমের দুই মাস সরকারি সিদ্ধান্তে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও এবারই এত দীর্ঘ সময় গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়াশাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, কারখানা চালু হোক, এটা আমরা সবাই চাই। উৎপাদন না হলে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। বিসিআইসিও চেষ্টা করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ চালু করতে। এটা সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি কমিশনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।