ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বর্ণনা দিলেন শহিদুল আলম

ইসরায়েলের কারাগারে আটকাবস্থায় মানসিকভাবে ব্যাপক নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। শনিবার বিকেলে দৃক পাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে ফেরার পর তিনি নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।
শহিদুল জানান, ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজ থেকে নামানোর পর তাদের বহুবিধ নির্যাতন করেছে; যার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ছিল মানসিক নির্যাতন। তাদের হাত পেছনে বেঁধে হাঁটুমুড়ে বসানো স্থানে আগে থেকেই মূত্রত্যাগের চিহ্ন ছিল এবং তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ওভালে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পাসপোর্ট তুলতে গেলে তাঁর ওপর চড়াও করা হতো।
প্রেস সম্মেলনে তিনি আরও জানান, জেলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য রাতে হঠাৎ করে মেশিনগান নিয়ে সেলে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি চালানো হতো; একই সঙ্গে সহযাত্রীদের হামাস সমর্থক দাবি করে কাউকে গুলি করে মারার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। একজন সহযাত্রী তাকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বিদেশি আরেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বলেছিল — “তুমি হামাসের এজেন্ট, ভেতরে নিয়ে তোমাকে গুলি করা হবে।”
শহিদুল বলেন, তারা কারাগারে অনশন করেছিলেন—কোনো খাবার না খেতে অনেকে দৃঢ় ছিলেন, যদিও শারীরিক দুর্বলতায় কয়েকজন অল্পমাত্রার খাবার গ্রহণ করেন। আড়াই দিনের মধ্যে তাদের মাত্র এক প্লেট খাবার দেওয়া হয়েছিল। তাদের শয়নকক্ষ ছিল লোহার, এবং শৌচাগারের অবস্থাও নির্বাসিত এবং অমানবিক ছিল।
তিনি জানান, কারাগারটি মরুভূমির গভীরে ছিল এবং সেখানকার বন্দিশালাগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। কিছু সহযাত্রীর ওপর সেলের মধ্যেই মেশিনগান দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সম্মেলনে এক সাংবাদিক পরবর্তী কার্যক্রম জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, তারা আন্তর্জাতিকভাবে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি জানান, “গ্লোবাল লিডাররা না করলে—আমরা, অ্যাকটিভিস্টরা—কীভাবে কাজ করব তার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের একটি ব্লুপ্রিন্ট আছে; ফেরার আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আবার যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।” পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় নাগরিক আন্দোলন চালিয়ে অর্জিত শিক্ষা এখানে প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শহিদুল তথ্য প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি মঞ্চে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন; তিনি তিনি দেশের নাগরিক অধিকারের পক্ষে বহুবার মঞ্চে কথা বলেছেন। দেশে ফেরেনোর পর এই সংবাদ সম্মেলন করে দেশের ও আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।