প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাথারিয়া পাহাড়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপম সৃষ্টি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া পাহাড়। স্থানীয়দের কাছে আদম আইল হিসেবে পরিচিত। বড়লেখা থেকে ভারতের পূর্ব সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জয়ন্তীয়া উচ্চভূমির আসাম অংশের ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাথারিয়া পাহাড়ি অঞ্চলের বিস্তৃতি।
প্রায় ১০০০ বছর আগে এই অঞ্চলটি গভীর অরণ্যে পূর্ণ ছিল। সেসময় পাথরি নামক নাগা জনগোষ্ঠীর একটি উপশাখার অধিবাসীরা এখানে বসবাস করতো। এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিল রেখে এই অরণ্য অঞ্চলের নামকরণ করা হয় পাথরিয়া। উঁচু-নিচু টিলা এবং সবুজ বৃক্ষ রাজিতে ঘেরা পাথারিয়া পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণার সমাহার পাথারিয়ার পাহাড়ি সৌন্দর্যে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
পাথারিয়া পাহাড় থেকেই মনমুগ্ধকর জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডের সৃষ্টি। পাথারিয়ার চূড়া থেকে ভারতের করিমগঞ্জ জেলা দেখা যায়। এছাড়া এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে কমলালেবু, আগর, নাগকেশর, পালান, বাঁশ, বেত, কালাকস্তরী, মুশকদানা ও বনঢ্যাঁড়শের চাষ হয়। মূলত পাথারিয়া পাহাড়ের চারদিকের সবুজ প্রকৃতি ও শান্ত শীতল ঝর্ণার রূপে মুগ্ধ হতে দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে ঘুরতে আসে।
কিভাবে যাবেন :
মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে পাথারিয়া পাহাড় অবস্থিত। ঢাকা থেকে হানিফ, এনা, শ্যামলী অথবা সিলেট এক্সপ্রেস বাসে কাঁঠালতলী বাজার নামতে হবে। কাঁঠালতলী থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে পাথারিয়া পাহাড়ে যেতে পারবেন।
আবার রেলপথে ঢাকার কমলাপুর থেকে পাহারিকা, উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত বা কালনি এক্সপ্রেসে কুলাউড়া ষ্টেশনে নেমে কাঁঠালতলী হয়ে পাথারিয়া অঞ্চলে যেতে পারবেন। এছাড়া মৌলভীবাজার থেকে বড়লেখা উপজেলায় পৌঁছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা চান্দের গাড়ি নিয়ে ডিমাই হয়েও পাথারিয়া পাহাড় যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:
পাথারিয়া পাহাড়ের কাছে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যাতায়াতের সুবিধার্থে মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রিযাপন সবচেয়ে ভালো। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কাছে ও বড়লেখা উপজেলায় বেশকিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া সুযোগ করে শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনের জনপ্রিয় সেভেন লেয়ার চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ভ্রমণ পরামর্শ:
বর্ষাকালে পাথারিয়া পাহাড়ের ঝর্ণাগুলো সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে, তাই এই সময় পাথারিয়া পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ভালো হলেও সাবধানতা মেনে চলুন।
স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে গেলে সহজে পুরো পাথারিয়া অঞ্চল সুন্দর করে ঘুরে দেখতে পারবেন।
পাথারিয়া পাহাড়ে যাওয়ার পথ বেশ দুর্গম তাই চলার সময় সাবধান থাকুন।
পুরো অঞ্চল ঘুরে দেখতে চাইলে ট্র্যাকিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া ভালো।