নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বুধবার,১৩ জুন ২০১৮:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রস্তাবে এখনও সম্মতি জানাননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৩ জুন) দুপুরে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার বিষয়ে আমরা প্রস্তাব জানিয়েছি। আইজি প্রিজন খালেদা জিয়াকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। তবে খালেদা জিয়া এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। তাঁর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও খালেদা জিয়া এখানে চিকিৎসা নিতে রাজি হননি।
ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কোনও হুমকি আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে দেবো না। আজ ২৮ রমজান পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর-বিশৃঙ্খল ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। আশা করি, কিছুই হবে না। এ পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট হুমকিও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। সারা দেশের মানুষ প্রত্যাশা অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, আপনজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। আমরা মনে করি, দেশবাসী এবার অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন।’
এর আগে গত ৯ জুন বিকেলে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত চারজন চিকিৎসক সাক্ষাত করে বেরিয়ে আসার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে। গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়া হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর একটি ‘মাইন্ড স্ট্রোক’ হওয়ায় তিনি ওই সময়টার কথা কিছু মনে করতে পারছেন না।’
এসময় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী ওই সময় সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। বেগম জিয়ার কথায় এখন কিছুটা জড়তা আছে, তবে কমিউনিকেশন করতে পারছেন।’
ওইদিনই নয়াপল্টনে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিন সপ্তাহ ধরে তিনি ভীষণ জ্বরে ভুগছেন।’
এমন অবস্থায় ৭৩ বছর বয়সী দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক কারাগারে খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি সুস্থ আছেন। যদিও ক্ষমতাসীনদের এমন দাবি বরাবরই ‘মিথ্যা-বানোয়াট’ বলে আসছে বিএনপি নেতারা।
এর আগে গত ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। সবমেশ গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ওইদিনই তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার পরিত্যাক্ত কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়ার কক্ষটিতে কোনও এয়ার কণ্ডিশনার নেই। কেননা, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হওয়ার পর এই ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছিলো না। তবে তাঁর রুমে ফ্যান, সোফা চেয়ার, টেবিল এবং একটি সেমি-ডাবল বিছানা রয়েছে। টেলিভিশন ও ফ্রিজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও, এখানে রান্না করার ব্যবস্থাও রয়েছে। রুমটির সঙ্গে লাগোয়া রয়েছে বাথরুম। খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্যে ২৫ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োজিত রয়েছে।