ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
সামনেই ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। আর এই ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে কক্সবাজারে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ছয় লাখ বাসিন্দা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফেডারেশ অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি)।
সংস্থাটি বলছে, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৫ লাখ ৭৪ হাজার বাসিন্দা ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব রোহিঙ্গা দেড় বছর ধরে শিবিরে শুধু বাঁশের কঞ্চি, ত্রিপল ও প্লাস্টিকের পলিথিন দিয়ে ছাউনির মতো করে বসবাস করায় তাদের ঝুঁকি বেশি।
গতকাল সোমবার আইএফআরসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেডক্রসের জরিপে দেখা গেছে, অতি গরম, বর্ষা ও বছরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সাত লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৮২ শতাংশের জরুরিভিত্তিতে শক্ত আশ্রয়ের প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী কাঠামোর ঘর নির্মাণের তাগিদ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম। গতকাল সচিবালয়ে সংস্থাটির দুর্যোগকালীন পরিচালক মোহাম্মদ আবদিকার মাহমুদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ তাগিদ দেন।
তবে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী কাঠামো সংবলিত আরসিসি ওয়ালের ঘর নির্মাণের তাগিদ দিলেও বাংলাদেশ তাদের এ প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেছে। বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের খণ্ডকালীন সময়ের জন্য আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাই বাংলাদেশ তাদের জন্য স্থায়ী কাঠামোর ঘর নির্মাণের পক্ষে নয়। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ৪২৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রয়োজন হলে আর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ সময় ১ লাখ রোহিঙ্গা পরিবারকে বোতলজাত গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দেয় আইওএম।
এদিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের গ্রহণে গড়িমসি করছে। দেশটির সেনাপ্রধান রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের কথা অস্বীকার করেছেন। গত শুক্রবার জাপানের গণমাধ্যম আশাহি শিমবুনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে, সে ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলার মাধ্যমে জাতির মর্যাদার ওপর আঘাত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমার সেনাঘাঁটিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা করেছিল। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যেই সেই সময় অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে কোনো নিপীড়ন করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন অভিযান শুরু হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।