শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

গতানুগতিক শপথবাক্য পাঠ আর কত দিন?

মোশাররফ হোসেন মুসা / ৭২ পাঠক
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

সমগ্র দেশে বিভিন্ন ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একসময় শপথবাক্য পাঠ করানো হবে। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন জেলা প্রশাসক কিংবা তাঁর প্রতিনিধি।

শপথবাক্যের কথাগুলো এরকম- আমি… … … পিতা/স্বামীঃ… … … গ্রামঃ… … … উপজেলাঃ… … … জেলাঃ… … … । আমি … … … পরিষদের চেয়ারম্যান/ সদস্য নির্বাচিত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী এবং সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সহিত আমার পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিব। আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব।

এ শপথবাক্য দীর্ঘদিন যাবৎ পাঠ করানো হচ্ছে। কিন্তু প্রতিনিধিদের মানসিকতার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের মেয়াদকালে বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারা স্থানীয় সরকার কাকে বলে, চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের দায়িত্ব কি, জনগণের কি কি সেবা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচিত হয়েছেন ইত্যাদি না জেনেই তাঁরা ভোটে দাঁড়ান। তাঁরা নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখেন না। ইউনিয়ন পরিষদকে স্বনির্ভর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেন না। বরং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রকল্প নেয়ার জন্য নানারকম ফন্দিফিকির করে থাকেন। কোনো কোনো প্রতিনিধি জনগণকে ইউপি ট্যাক্স পরিশোধ করতে নিরুৎসাহিত করেন। তাঁরা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেন- তিনি নির্বাচিত হলে ট্যাক্স মওকুফ করে দেন। তারা ভুলে যান যে, স্বশাসন চাওয়ার আগে স্বনির্ভর হতে হয়। কোনো কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য নাম ও ঠিকানা না লিখেই পরিচয় পত্র(নাগরিকত্ব সনদ) দিয়ে দেন। তাঁরা প্রকাশ্যেই বলেন-সামান্য একটি পরিচয় পত্র যদি না দিতে পারলাম, তাহলে মেম্বর হয়েছি কেন! অথচ একটি নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে বিদেশের কোনো নাগরিক এদেশের পাসপোর্ট তৈরি করে নিতে পারে। (মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারাদের নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ায় কয়েকজন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে)।

তারা বুঝতে চান না, নাগরিকত্ব সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করলে কিছু নিয়ম চালু করতে পারে। যেমন, যারা ভোটে প্রার্থী হবেন তারা ছয় মাস কিংবা এক বছর পুর্বে তালিকাভুক্ত হবেন। তালিকাধারী ব্যক্তিরা তিন দিনের প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করবেন এবং তারা প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেটধারী হবেন। সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিরাই শুধু প্রার্থী হতে পারবেন( জাতীয় নির্বাচন সহ অন্যান্য নির্বাচনে প্রার্থীদের বেলাতেও একই নিয়ম চালু করা যেতে পারে)। সেসঙ্গে শপথ বাক্যের কথাগুলো পরিবর্তন হওয়া দরকার। যেমন, আমি স্থানীয় সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালনে শতভাগ সচেষ্ট থাকবো। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবো ইত্যাদি। তবেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কিছুটা হলেও দায়িত্বশীল হবেন- তাতে সন্দেহ থাকার কারণ নেই।

লেখক- গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *