নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার,১৯ ডিসেম্বর ২০১৭: যুদ্ধদিনের পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানার পর গৌরনদীর বীরাঙ্গনা বিভা রানীকে নিয়ে সংসার করতে রাজি হয়নি তার স্বামী অনুকূল মজুমদার। তিনি একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্র সন্তানসহ বিভা রানীকে ত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমান। সেই থেকে প্রতিবন্ধী পুত্র সাগরকে নিয়ে অথৈ সাগরে ভেসে চলেছেন বিভা রানী।
সংসারের চাকা সচল রাখতে তিনি সেলাইয়ের কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে তাকে ধাত্রীর কাজ করতে হয়। জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধী সন্তান সাগরকে নিয়ে বিভা রানীর আরেক সংগ্রাম।
বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা পালরদী নদী সংলগ্ন গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের বাসিন্দা মৃত উমেশ চন্দ্রের আড়াই কাঠা জমিতে টিনের ঘর। এ টিনের ঘরেই একমাত্র ভাই উপেন্দ্র নাথ মণ্ডলকে নিয়ে বিভা রানী সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসতেই বিভা রানী অনেকটা আনমনা হয়ে বলেন, আমার বাবা টরকীর চরে বহুদিন ধরে বসবাস করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। এখানে আমরা চার বোন ও এক ভাই ছিলাম।
১৯৭১ সালে আমি টরকী হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে পাকিস্তানী মিলিটারিদের নিয়ে আসে স্থানীয় রাজাকাররা। চারিদিকে আগুন দিতে শুরু করে। লোকজন যে যেদিক পারে ছোটাছুটি করছিলো। আমার বাবা তখন পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
বাবা আমাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালকিনির রমজানপুরের দিকে ছুটলেন; কিন্তু তখন আমরা দিগবিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম। আমিসহ বেশ কয়েকজন রাজাকারের হাতে ধরা পড়ি। তাদের পাশবিক নির্যাতনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।
পরবর্তীতে আমাকে বাবা খুঁজে ঘরে নিয়ে আসে। বিভা রানী আরো বলেন, শ্রাবণ মাসে একই গ্রামের অনুকূল মজুমদারের সাথে আমার বিয়ে দেন। পরবর্তীতে আমরা দুইটি পরিবারের ১০ জন সদস্য টরকী থেকে নৌকাযোগে আটদিন পর ভারতে গিয়ে পৌঁছি।
দেশ স্বাধীনের পর সবাই আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমার স্বামী আমার ওপর পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানতে পেরে আমাকে নিয়ে সংসার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে আমাদের সংসারে পুত্র সাগর জন্ম নেয়। সেই থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।