স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: অবহেলিত লিটল মাস্টার মুমিনুল হক, সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ’র ব্যাটিং নৈপুণ্যে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে টাইগারদের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বর্তমান শিষ্যদের সামনে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫১৩। বাংলাদেশর হয়ে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রাহক মুমিনুল হক ১৭৬ রান, মুশফিকুর রহিম ৯২ রান এবং অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৮৩ রান।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব পাওয়া মাহমুদুল্লাহ। এদিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় ম্যাচটি।
দিনের শুরুটা দারুণ করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ব্যক্তিগত ৫২ রান করে তামিম দিলরুয়ান পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরলেও ভাগ্য বাম হওয়ায় দলীয় ১২০ রানে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে ফিরেন ইমরুল। স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যাওয়া সান্দাকানের বলটি ইমরুলের প্যাডে আলতো আঘাত হানলে লঙ্কানদের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ না নেয়াটা যে ভুল ছিল ড্রেসিং রুমে ফিরে তা নিশ্চয় উপলব্দি করতে পেরেছেন ইমরুল।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে বলতে গেলে তামিম-ইমরুলের ফিরের যাওয়ার পর আরও শক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। একপাশে মুশফিকের টেস্ট সূলভ ব্যাটিং চললেও এদিন সেঞ্চুরি তুলতে মাত্র ৯৬ বল খরচ করেন মুমিনুল। দেশে হয়ে তৃতীয় দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও ঝুলিতে পুড়েন তিনি।
মুশফিক ও মুমিনুল ২৩২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। টাইগার সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল অবিচ্ছিন্ন থেকেই দিনটি পুরোপুরি নিজেদের করে নেবে। তবে সেই আশা পূরণ করতে দেননি লাকমাল। দিন শেষের মাত্র ৪ ওভার আগে টাইগার শিবিরে আঘাত করেন লাকমাল। দলীয় ৩৫৬ রানে ফেরান মুশফিককে। এরপর লিটনের বাড়ি যাওয়ার তাড়া বুঝলেন ওই লাকমালই। পরের বলেই শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান লিটনকে। পরে ক্যাপ্টেন এসে দিন শেষ করেন।
দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ২০১৩ সালে এই চট্টগ্রামেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের ইতিহাসের তালিকায় নাম লেখাতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এবার একই মাটিতে সেই আক্ষেপ রয়ে গেল বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যানখ্যাত মুমিনুল হকের। তামিম, সাকিব, মুশফিকের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের তালিকায় নিজের নাম লেখানোর আক্ষেপ নিয়ে ফিরেন মুমিনুল।
টাইগার ভক্তদের আশা ছিল আজ (বৃহস্পতিবার) ডাবল সেঞ্চুরি করবেন লিটল মাস্টার। সেই আশা পূরণে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে শিশির ভেজা মাঠে নামলেন মুমিনুল। তবে দিনের শুরুটা ভালো করতে দেননি আগের দিনে কোনো উইকেটের দেখা না পাওয়া লঙ্কান যোদ্ধা রঙ্গনা হেরাথ। এদিনে দলীয় ২ রান যোগ করতেই ভক্তদের আশা ভঙ্গ করেন মুমিনুল। ১ ছক্কা ও ১৬ চারের সুবাদে ১৭৬ রান করে ফেরেন দীর্ঘদিন পর চেনা রূপে ফেরা মিস্টার ওয়াল।
মুমিনুলের ফেরার পর লিটন দাসের মতো হতাশ করেন মোসাদ্দেক হোসেন। মুমিনুলের বিদায়ের ৪ ওভার পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। হেরাথের শিকার হওয়ার আগে করেন মাত্র ৮ রান। ওপেনার তামিমের মতো ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে থামা মিরাজও খুব বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি। ১৯ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরেন রান আউট হয়ে।
এরপর এসে টেস্টে নবাগত সানজামুল ইসলাম কিছু অধিনায়ককে সঙ্গ দেন। অধিনায়কও নিজের প্রথম নেতৃত্বের ম্যাচে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। সানজামুল ফেরেন দলীয় ৪৭৫ রানে। সানজামুল ব্যক্তিগত ২৪ রানে ফেরার পর তাইজুলের ফিরতে লেগেছে মাত্র ৫ বল। হেরাথের শিকার হয়ে ফিরেছেন ১ রানে। এরপর ব্যাটসম্যান লিটন-মোসাদ্দেকের ব্যর্থতার দিনে নিজেকে ব্যাটিং রূপে রূপ দেন কাটার মাস্টার টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক-কাটার মাস্টারের ৩৪ রানের জুটি ভাঙলেন লাকমাল। মাহমুদুল্লাহ ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন আর মোস্তাফিজ ২১ বল মোকাবেলা করে করেন ৮ রান।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ করে উইকেট নেন সুরঙ্গা লাকমাল ও রঙ্গনা হেরাথ। এছাড়া লাকশান সান্দাকান ২টি ও দিলরুয়ান পেরেরা নেন একটি উইকেট।