সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

পলাশবাড়ীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অস্তিত্বহীন হাজিরা মেশিন

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ২০ পাঠক
শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩

নির্দেশনা অমান্য করে ক্রয় করা গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের কার্যক্রম অস্তিত্বহীন। এসব হাজিরা মেশিনের কার্যক্রম চালু হবে কিনা বলতে পারছেন না খোদ শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারাও। ২০২০ সালে ২১ সেপ্টেম্বর পলাশবাড়ী পৌর শহরের গৃধারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের শুভ উদ্বোধন করেন গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি। এরপর আর কোথাও এর কার্যক্রম দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পলাশবাড়ী উপজেলায় ২১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রয় করা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। যার ব্যয় ধরা হয়েছে অর্ধকোটি টাকা।

ডিজিটাল এ যন্ত্রটির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া ও শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা। তবে নিম্নমানের যন্ত্র ও সঠিক তদারকির অভাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ পলাশবাড়ী উপজেলায় ভেস্তে গেছে। যন্ত্রটি স্থাপন করার উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত ও ছুটির সময় শিক্ষকরা হাজিরা মেশিনে আঙুলের ছাপ দেবেন। শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু গত দুই বছরে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করা এসব হাজিরা মেশিনের কার্যক্রম উপজেলার কোন বিদ্যালয়েই চালু হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্লিপ ফান্ডের টাকা থেকে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কেনার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদান করলেও পলাশবাড়ীতে করোনাকালীন সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার একেএম আব্দুস ছালাম অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্লিপ ফান্ডের টাকা থেকেই মাত্র ৯ হাজার টাকা মূল্যের নিন্মমানের ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ২২ হাজার টাকায় ক্রয় করতে বাধ্য করেছিলেন প্রধান শিক্ষকদের। শুধু তাই নয় সেই সময় আ্যাকটিভ পাওয়ার লিমিটেড ৫৫ এর কাছ থেকেই ডেডকেটেকো ব্যান্ডের মেশিন ক্রয় করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। অথচ ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মেশিনই যে নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, আমরা স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে হাজিরা মেশিন কিনেছিলাম। করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবহার করা হয়নি। নতুন করে কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় এখন ব্যবহার হচ্ছে না বায়োমেট্রিক হাজিরা। ফলে বাধ্য হয়ে ম্যানুয়াল হাজিরা খাতা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

শিক্ষকদের মতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের এটি একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করা হয়েছে এটি যেন লোক দেখানো না হয়ে বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়। এতে শুধু শিক্ষক হাজিরা নয় বাড়বে শিক্ষার মান। একই সঙ্গে কমবে শিক্ষক অনুপস্থিতির মানসিকতা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা খাতুন বলেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিনগুলো কি অবস্থায় আছে আমার জানা নেই, তবে উপজেলার কোন বিদ্যালয়েই হাজিরা মেশিনের কার্যক্রম নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, নতুন করে সফ্টওয়্যার আপডেট ও সার্ভার কানেকশন দিলে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক হাজিরা চালু করা সম্ভব। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, আমি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হলেও সেই সময় হাজিরা মেশিন ক্রয়ের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি, এসব অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে সেই সময় জেলা শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই পাতার আওর সংবাদ