নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,সোমবার,২২জানুয়ারী ২০১৮: রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হিমঘরের সবগুলো ফ্রিজ বিকল হয়ে পড়েছে। এতে সেখানে থাকা লাশগুলো পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি লাশ আর শনাক্তই করা যাচ্ছে না।
ফ্রিজগুলো সচল করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা লাশগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে।
রমেক হাসপাতালের হিমঘরে দেখা যায়, লাশের প্রচণ্ড দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা নেই। কর্তব্যরত ডোম মানুর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হিমঘরের তিনটি ফ্রিজের সবগুলোই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে এসব ফ্রিজে থাকা ১০টি লাশে পচন ধরেছে। এর মধ্যে চারটি লাশ এই হিমঘরে রয়েছে দুই থেকে চার বছর ধরে।
ডোম মানু আরও জানান, এর আগেও একাধিকবার বিকল হয়ে পড়েছিল ফ্রিজগুলো। প্রতিবারই ফ্রিজ সারাতে বেশি দিন সময় লেগেছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা লাশগুলো এখন কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। এগুলো শনাক্ত করার কোনও উপায় নেই। অপেক্ষাকৃত নতুন লাশগুলোও এখন পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে নীলফামারীর বিনতী নামে এক নারী বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে গুরুতর অবস্থায় রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা যায়, ওই নারী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এক মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেন। মেয়েটির পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। তারা আদালতে মামলা দায়ের করে। সেই মামলা এখনও নীলফামারী আদালতে বিচারাধীন।
বিনতীর আত্মহত্যার পর তার লাশ নিতে পাল্টাপাল্টি আবেদন করা হয় তার স্বজন ও শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে। তবে লাশটি কারা গ্রহণ করবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও আদালত দেননি। ফলে এই চার বছর ধরে বিনতীর লাশটি পড়ে রয়েছে রংপুর মেডিকেলের হিমঘরে।
একইভাবে, ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির। একই বছরের ৫ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুই অজ্ঞাত নারী। বিনতীর পাশাপাশি এই তিনটি লাশও পড়ে রয়েছে হিমঘরে। এই দীর্ঘ সময়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশগুলো দাফন করার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
এই চারটি লাশের বাইরে বর্তমানে রমেক হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে আরও ছয়টি লাশ। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার দেবীগজ্ঞ উপজেলা সদরের রোস্তম আলীর কন্যা আরজিনা বেগম। পাঁচ দিন আগে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আরজিনার স্বজনরা লাশটি নিতে না আসায় ওই লাশটির ঠিকানা হয়েছে হিমঘর। এভাবে আরও পাঁচটি বেওয়ারিশ লাশসহ হিমঘরের ফ্রিজে লাশের সংখ্যা মোট ১০টি।
হিমঘরের কর্মচারী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘হিমঘরের চারটি লাশ অনেকদিন ধরে পড়ে আছে। নতুন আরও ছয়টি লাশ যোগ হয়েছে সম্প্রতি। ফ্রিজ নষ্ট হওয়ায় বাধ্য হয়ে লাশগুলো ফ্রিজ থেকে বের করে ঘরের ফ্লোরে রাখা হয়েছে। লাশের দুর্গন্ধের কারণে হিমঘরে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও বিকল হওয়া ফ্রিজগুলো সচল করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম হিমঘরের ফ্রিজগুলো বিকল হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগেও গত বছরের জুলাই মাসে হিমঘরের ফ্রিজগুলো বেশ কিছুদিন বিকল ছিল। অনেক তদবিরের পর সেগুলো সচল হলেও আবারও বিকল হয়ে গেছে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা চারটি লাশের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে।