নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭: রাজধানীর বনানীর ৪ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসায় অফিসে ঢুকে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে হত্যার ঘটনায় করা মামলা থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর হলেও এখনও অধরা সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট) ফুটেজে শনাক্ত হওয়া ৪ খুনি। পুলিশ তাদের হন্নে হয়ে খুঁজছে- এমনটি জানা গেলেও খুনিরা এখনও নাগালে বাইরেই।
পুলিশের ধারণায় ‘মুন্সি ওভারসিজ’র মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সি ‘টার্গেট কিলিং’ এর স্বীকার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া চার মুখোশধারী সন্ত্রাসীকে খুঁজছে পুলিশ। পুলিশের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ দেখেই তাদেরকে সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের পরনে ছিল শার্ট ও প্যান্ট।
গতকাল বুধবার (২২ নভেম্বর) সিদ্দিকুর রহমান মুন্সি হত্যায় দায়ের হওয়া মামলাটি থানা থেকে ঢাকা মেট্রাপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন ব্রেকিংনিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ১৪ নভেম্বর রাতে বনানীর অফিসে ঢুকে মুখোশধারীরা ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে হত্যা করে। ঘটনার প্রায় ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয়ে এখনও অন্ধকারে বলেও জানা গেছে। সন্দেহভাজন মুখোশধারী খুনিদের খোঁজে অভিযান চলছে, যেকোনও সময় গ্রেফতার হবে এমনটাই বলছে থানা পুলিশ ও ঢাকা মেট্রাপলিটন গোয়েন্দা পুলিশও।
বনানী থানা পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা মুখোশ পরে এসেছিল। হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনও নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক, স্থানীয় কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। অফিস ও এর আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে হত্যাকাণ্ডের ‘ক্লু’ সংগ্রহের কাজ চলছে। হত্যাকাণ্ডটি যে ‘পরিকল্পিত’ তা প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেলেও এখনও হত্যার সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ জানা যায়নি। সবদিক থেকেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শণাক্ত হওয়া চার খুনিকে ধরতে তারা তৎপর। প্রযুক্তি এবং অন্যান্য পন্থায় তাদেরকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশে ছিলো। সেসময় থেকেই ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ ছায়া তদন্ত করে আসছে। ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু ‘ক্লু’ পেয়েছে।
ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে গুলি করে হত্যার পরদিন ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বনানী থানায় নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৪ জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন।
বানানী থানার পরির্দশক (তদন্ত) আবুল মতিন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “স্পর্শকাতর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত হত্যাকারীদের শণাক্ত করতে আমরা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এরপর ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ফুটেজে ৪ জন মুখোশধারীকে ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে দেখা গেছে।”
হত্যার পরদিন ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেনের (৫৫) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গুলিতেই নিহত হয়েছেন সিদ্দিক হোসেন। ওই ব্যবসায়ীকে দু’টি গুলি করা হয়েছিলো। একটি গুলি তার বাম হাতে লেগে বুকের ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আরেকটি গুলি বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশে গিয়ে আটকে ছিল, যা উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই সিদ্দিক মুন্সির বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহে নামে পুলিশ। স্বজনরা জানিয়েছে, চাঁদা না দেয়ায় সিদ্দিক মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় অফিসে ৮ জন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তারা জানান, হত্যার পর মুখোশধারীরা টেবিলের ড্রয়ার থেকে টাকা লুট করে।
এদের একজন জাফর বলেন, “চারজন মুখোশধারী ঢুকেই ক্যাশ কোথায় জানতে চায়। আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলল, টাকা ব্যাংকে জমা থাকে। এ কথা শুনে দুর্বৃত্তরা বকাবকি শুরু করে এবং একটি গুলি করে, কিন্তু (পিস্তল বা রিভলবার থেকে) গুলি বের হয়নি। পরে আবার তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে চলে যায়।”
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সিদ্দিক ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হন মোস্তাক (৪২), মোখলেসুর রহমান (৩৮) ও পারভেজ আহমেদ (২৮) নামে আরও তিনজন। নিহত সিদ্দিক মুন্সির বাসা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।