নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন করাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে বিকেল ৫টার দিকে গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন ডেকে মায়া কান্না কেঁদেছেন খালেদা জিয়া। আদালতকে বিব্রত, বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা নজিরবিহীন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎ অনেক মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিএনপি। দেশের আইন আদালতকে নোংরা রাজনীতিতে নিয়ে গেছে বিএনপি।’
এর মধ্য দিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির চিত্র লিখিতভাবে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। এই নীতি সারা পৃথিবীতে চলে। আমাদের সংবিধানেও এই কথা উল্লেখ আছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। সবার জন্য আইন সমান। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। বাংলাদেশে এই যাবৎ অনেক মামলা হয়েছে। কিন্তু একটি মামলা নিয়ে বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে। ভিত করতে চাইছে দেশের মানুষকে।’
বিএনপির নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কেউ রাজনীতি করলে কি আদালতে দুর্নীতির বিচার হবে না? তিনি কি আইনের ঊর্ধ্বে চলে যাবে? বিএনপির চেয়ারপারসন বলেই কি বিতর্ক করতে চাচ্ছে? অপরাধী শক্তশালী হলেই কি পার পেয়ে যাবে?’
খালেদা জিয়ার মামলার সাথে সরকারের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই- আবারও এমন দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলার সঙ্গে সরকারের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে সশ্লিষ্টতা আছে দেশের এতিমদের, জনগণের। মামলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দিনের পর দিন কালক্ষেপণ করা হয়েছে। আদালতকে হেনস্তা করা হয়েছে।’
অপরাধী কখনও অপরাধ স্বীকার করে না উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘আদালত রায় দেবে আইনি প্রক্রিয়ায়। যদি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
কাদের বলেন, ‘মামলার রায় নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি করা হয়েছে তা কি আগে কখনো ঘটেছে? আদালতের মামলা কেন রাজনীতিতে নেমে এসেছে? প্রধানমন্ত্রী রায় লিখে দিয়েছে এই কথাগুলো কি আদালত অবমাননা নয়? আমাদের দুর্ভাগ্য আইন-আদালতের বিষয়কে রাজনীতির অঙ্গনে নিয়ে আসা হয়েছে। রায় খালেদা জিয়ার পক্ষে গেলে স্বাগতম আর বিপক্ষে গেলে আন্দোলনের ডাক। এই নোংরা রাজনীতি ডেকে এনেছে বিএনপি।’
খালেদা জিয়াকে নির্মূল করার ইচ্ছা আওয়ামী লীগের নেই। দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। প্রতিহিংসার রাজনীতি করে বিএনপি। তারা তো এখন বাইরে কোনও প্রোগামও করতে পারে না। তারা ঘরের ভেতর সংবাদ সম্মেলন করে। কতগুলো প্যাথলজিকেল লায়ার সারা দিন ঘরে বসে বসে মিথ্যার ভাঙা রেকর্ড বাজায়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন বলেন তাঁর সেনাবাহিনী আর পুলিশ প্রশাসন আছে তবে কেন বিএনপি ভয় পায়। অভয় দিয়ে তাহলে এতো কেন ভয়? আওয়ামী লীগ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর। সন্ত্রাসের মাধ্যমে দুর্নীতি ঢাকা যাবে না। আওয়ামী লীগ কোনও সন্ত্রাস ও সহিংসতা সহ্য করবে না। একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়েছে এটা তো আগে কখনো হয় নি। এবারই প্রথম। বিএনপি তাদের পুরোনো আগুন সন্ত্রাসে ফিরে যেতে উস্কানি দিচ্ছে।’
কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার ওপর এটেম্পট বিএনপিও করেছে। তারপরও তিনি খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা জানাতে গিয়েছিলেন। বিএনপির নেতারা সব প্যাথলজিক্যাল লায়ার।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের সিলেট সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া মাজার জিয়ারতের নামে গিয়েছিলেন শোডাউন করতে। তিনি মনে করেছিলেন জনগণের ঢল নামবে। কিন্তু নামেনি। তাই তিনি হতাশ হয়ে রাতেই ফিরে এসেছেন।’
কাদের বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিয়েছে।’
রায়ের দিন নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো পাল্টাপাল্টি কোনও অবস্থায় যাইনি। এটা তো দুর্নীতির বিষয়। এ নিয়ে রাজপথে কি করার আছে? তিনি (খালেদা জিয়া) নির্দোষ প্রমাণিত হলে আমাদের সমস্যা কি?’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবাহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ।