সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
রাজনৈতিক দলে সংকট, সমঝোতার চেষ্টায় সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে গিয়ে আ. লীগই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে : ড. আব্দুল মঈন খান নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিএনপিতে ক্ষুব্ধ ভোটাররা চান দুর্নীতিমুক্ত প্রার্থী গাজার পথে মুক্তি পাওয়া ১৯৬৬ ফিলিস্তিনি তরুণ কৃষি-উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্যের মূল্যায়নে বাংলাদেশের দুই বিমানবন্দর শীর্ষে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’: ১৫ সেনা কর্মকর্তা ‘হেফাজতে’ ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বর্ণনা দিলেন শহিদুল আলম এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত: জ্বালানি উপদেষ্টা

আট দাবিতে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সংবাদ সম্মেলন

ডেস্ক রিপোর্ট | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: / ১২০ পাঠক
প্রকাশকাল মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া সহ ৮ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বড়ুয়া জনগোষ্ঠী নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা ও সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চারি খণ্ড (ক, খ, গ, ঘ) সম্মিলিতভাবে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তি করা হয়।

পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির পরেও ২৭ বছর ধরে পাহাড়ের বাঙালিরা (মুসলমান, হিন্দু ও বড়ুয়া) চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্য ব্যতীত মুসলমান, বড়ুয়া, হিন্দু, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও মো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এই চুক্তিতে রাঙামাটি চাকমা, খাগড়াছড়ি ত্রিপুরা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা মারমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি উপজাতি জনগোষ্ঠীকে এককভাবে সুবিধা করে দিয়েছে। এতে শুধু সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্যই হচ্ছে না, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান, হিন্দু ও বড়ুয়া নাগরিককে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

চুক্তির পর বিভিন্ন কমিটি, বোর্ড, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি, আঞ্চলিক পরিষদ, জনগোষ্ঠী প্রতিনিধি গঠন করা হলেও এসব কমিটিতে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয়নি বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি। বিগত স্বৈরাচার শাসনকালীন ১৭ বছর ধরে পাহাড়ে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কিছু পদলেহনকারী স্বঘোষিত নেতার কারণে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ১৭ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালীন তার দলীয় লোকজন বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-এর মহাপরিচালক ড. বেনজির আহমেদের নির্দেশে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের অপহরণ করে সিলেটের চুনারুঘাট থানার সাতছড়ি জঙ্গলে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীর প্রত্যাশা ছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ বৈষম্যের শিকার বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ও বাঙালিরা ন্যায্য অধিকার পাবে। কিন্তু বর্তমান বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে ধারণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নতুনভাবে গঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে পূর্বের মতো বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে।

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চাকরি ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বাঙালিদের জন্য ৩০ শতাংশ ও নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জন্য ৭০ শতাংশ বরাদ্দ নীতি অবলম্বন করা হয়েছে।

এছাড়াও নৃগোষ্ঠীদের জন্য রাখা কোটার ৭০ শতাংশই চাকমা সম্প্রদায়ের। ফলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাসরত বাঙালি, বড়ুয়া, মারমা জনগোষ্ঠীসহ আরও বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের দাবি:
১. পার্বত্য চুক্তিটি সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড সভা, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটি, ২৬টি উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও পৌরসভার শহর উন্নয়ন কমিটিতে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্যে রাঙামাটি জেলার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ছকে বৌদ্ধ বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর পরিচিতি আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি। শুমারিতে বৌদ্ধ “বড়ুয়া” জনগোষ্ঠীর পরিচিতি আলাদাভাবে ছকে সংযুক্ত করা।
৪. বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে সংসদ সদস্য পদ সংরক্ষিত করে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া।
৫. বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে তিন পার্বত্য জেলা থেকে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
৬. ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অন্য জনগোষ্ঠীর মতো বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রী ও সদস্যদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
৭. জাতীয় দিবস ও শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো।
৮. দাবিগুলো মানা না হলে গণতান্ত্রিক পন্থায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডা. বাদল বরণ বড়ুয়া, প্রধান উপদেষ্টা ভদন্ত অদিতানন্দ মহাথেরো, কেন্দ্রীয় সংগঠক ত্রিদিব বড়ুয়া টিপু, শিক্ষক প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, জেলা সংগঠক নিপ্পন বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়া প্রমুখ।


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর