শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,শনিবার,৩০ ডিসেম্বর ২০১৭: টগবগে যুবক আঙ্গুর মিয়া। বয়স সবে মাত্র ৩৫। বিয়েও করেছেন বটে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার নামের জীবন সংগ্রাম তার। সাদুল্যাপুর শহর সংলগ্ন কামারপাড়া ইউনিয়নস্থ পুরান লক্ষীপুর (দ্বীপ) ঘাঘট নদের তীরে আঙ্গুর মিয়ার বাড়ি। পিতা এনছার আলী বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত এক একর জমি চলে গেছে সর্বনাশা ঘাঘট নদের পেটে। এখন শুধু ৯ শতক জমির উপড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার বসবাস।
গত বছর জীবিকার তাগিদে আঙ্গুর মিয়া কাজ করতে যায় টাঙ্গাইল জেলায়। সেখানে যমুনা নদে দেখতে পায় ভাসমান খাঁচা পদ্ধতি মাছ চাষ। জানতে পারেন এ পদ্ধতি মাছ চাষ অনেকটাই লাভজনক। ওই অনুকরণ কাজে লাগানোর চেষ্টায় আঙ্গুর মিয়া ছুটে আসেন লক্ষীপুর গ্রামের বাড়িতে। বাড়ি সংলগ্ন ঘাঘট নদে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতি মাছ চাষ করার মনস্থির করেন সে।
তবে কিছু অর্থের প্রয়োজন। গচ্ছিত কোন টাকা-পয়সা না থাকায়, স্ত্রী মনজিলা বেগমের পালিত দুটি ছাগল ও কয়েকটি হাঁস-মুরগী বিক্রি করেন। আঙ্গুর মিয়া এই অর্থ দিয়ে প্রায় মাস দেড়েক আগে ৩০ ফুট লম্বা, ১৫ ফুট প্রস্থ একটি খাঁচা তৈরী করেন। ঘাঘট নদের মধ্যস্থানের পানিতে বাঁশ ও ফিল্টার নেটজাল দিয়ে ওই খাঁচা তৈরী করেছেন আঙ্গুর মিয়া। পানির গভিরে ১০ ফুট নেটজাল ঝুলিয়ে পুরো খাঁচাটি আবদ্ধ করা হয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিগহেড প্রজাতির ১২শ পোনা খাঁচায় ছেড়ে দেয়া হয়। এই প্রথম পরীক্ষা মূলক ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেছেন বলে জানান আঙ্গুর মিয়া।
স্ত্রী মনজিলা বেগমের সহযোগিতায় আবদ্ধ খাঁচার মাছগুলোতে নিয়মিত খাদ্য দিয়ে আসছেন। সাদুল্যাপুর উপজেলায় এই প্রথম আঙ্গুর মিয়াই ভাসমান পদ্ধতি মাছ চাষ করেছেন বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে।
সরেজমিনে মৎস্য চাষী আঙ্গুর মিয়া বলেন, ভাসমান খাঁচায় পোনা ছেড়ে দেয়ার তিন মাস পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ১৫ হাজার টাকা। এ থেকে প্রায় ১৫ মণ মাছ উৎপাদন হতে পারে। যা বিক্রি করলে প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
এ পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ অনেকটাই লাভজনক। তবে শুকনো মৌসুমে নদে স্রোত না থাকায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায় বলে তিনি জানান। আঙ্গুর মিয়া আরও বলেন, সরকারের মৎস বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ সহ আর্থিক সহযোগিতা পেলে একাধিক খাঁচায় মাছ চাষে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে আঙ্গুর মিয়ার অভিযোগ, এ বিষয়ে উপজেলা মৎস অফিসে যোগাযোগ করেও কারও কোন পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
সাদুল্যাপুর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আইরিন সিদ্দীকা জানান, ওইস্থানে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতি মাছ চাষ হচ্ছে তা আমার জানা নেই। খতিয়ে দেখে পরামর্শ প্রদান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।