শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

প্রভাবশালীদের দখলে সরকারি জলমহাল

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৯ পাঠক
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এক সময়ের মাছের অভয়াশ্রম সরকারি খাসজমির জলমহালগুলো এখন বেআইনি উপায়ে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে ভরাট করে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে পরিণত করেছে।

নামে-বেনামে কিছু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজস করে জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের হাতে তুলে দেয়ায় কয়েকশত কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এদিকে ওই জলমহালগুলোতে মাছ শিকার বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় জেলে পল্লীর মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ একর জমিতে সরকারি ২০টি জলমহাল ও পাঁচটি প্লাবনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রাজারহাট সদর ইউনিয়নে বড়গিলা, সরলা, দেউলার বিল, চাকিরপশার ইউনিয়নে চাকিরপশার বিল, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে চতলার বিল, চতলার কুড়া, নাখেন্দার বিল, কোটেশ্বর বিল, ফতেখাঁ মেঘার দিঘি, পুরাতন হাটখোলা এবং ঘড়িয়ালডাঙ্গা বিল রয়েছে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে বাদিয়ার ছড়া, মাল্লির ছড়া, উকিলের ছড়া, ছিনাই ইউনিয়নে বুড়িদহ সাতবোন, ফড়িংয়ের ছড়া, কামারের ছড়া, মজুদদারের দিঘি, নাজিম খান ইউনিয়নে যুগিদহ বিল এবং উমর মজিদ ইউনিয়নে মাদারেরকুড়া নামক জলমহাল রয়েছে।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে খাস জমির ওপর প্লাবনভূমি ও জলাশয়। তবে কাগজ-কলমে মাছ চাষের বিলের জমির পরিমাণের সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল নেই। অধিকাংশ বিলের জমির বৃহদাংশ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। ইতোমধ্যে দেউলা, চতলা, বড়গিলা, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, চাকিরপশার, কৈলাশকুটিসহ প্রায় সবগুলো বিলের বৃহৎ অংশই প্রভাবশালীরা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দখলে নিয়েছে। একইভাবে ঘড়িয়াডাঙ্গা, সরলা ও বড়গিলা বিল দখল করে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে আসছে প্রভাবশালীরা। অথচ এসব বিল কাগজ-কলমে সরকারি হিসেবে রয়েছে। বিলগুলো দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ার কারণে বিভিন্ন অংশ নাব্যতা হারিয়েছে।

চাকিরপশার বিল ঘুরে দেখা গেছে, বিলের ১৫৪ একর জমির মধ্যে অর্ধেক জমিও জলমহালে নেই। বিলের বিভিন্ন অংশে প্রভাবশালীরা পাড় বেঁধে পুকুর, বাড়িঘর তৈরি এবং মাঝে মাঝে রাস্তা নির্মাণ করায় বিভক্ত হয়েছে।

চাকিরপশার বিলের মৎস্যজীবী কমিটির সভাপতি জোগেন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা চাঁন্দামারী জেলেপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ২০১৭ সালে তিন বছরের জন্য ১৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় চাকিরপশার বিলটি লিজ নেই। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ১৪১ একর জমির ওপর বিল থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিন আছে মাত্র ৬০ একরেরও কম। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লিজের পুরো টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

বাদিয়ার ছড়া বিলের মৎস্যজীবী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শচীন চন্দ্র বলেন, জলমহালের পাশের প্রভাবশালীরা জলাশয়ের বেশরিভাগ অংশ দখলে নিয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসন বিল উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

উপজেলার কোটেশ্বর বিলের মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি স্বপন জানান, কাগজ-কলমে ৩২ দশমিক ৯৯ একর জমি থাকার কথা। কিন্তু রয়েছে প্রায় ১১ একর। বাকি জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে পুকুর ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছে।

এ ব্যপারে ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, প্রায় সবগুলো বিলের বিপুল পরিমাণ জমি বেদখলে গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলার বিলগুলো উদ্ধার হলে মাছ চাষে বিপুল সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বিলের জায়গা অবৈধ দখলদারদের তালিকা, সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া চলছে। শেষ হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *