শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

এ কে আজাদ, চাঁদপুর ব্যুরো প্রধান। / ৩৯ পাঠক
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন, সাংবাদিকতার মুল বিষয়ই হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠতা। সমাজের যেখানে অসঙ্গতি, দুর্নীতি ও সমস্যা আছে যেগুলোকে যেমন তুলে ধরা এবং সমাজের যত ইতিবাচক দিক আছে, যত শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস্য আছে সেগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।

সোমবার (৪ জানুয়ারি) রাতে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব সুবর্ণজয়ন্তী ও নবাগত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়্যালি প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শধুমাত্র চাঁদপুরেই নয়, অনেক সাংবাদিক জাতীয় পর্যায়ে কাজ করে আমাদেরকে অনেক সম্মানিত করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।

মন্ত্রী বলেন, এখন সাংবাদিকতার জগৎটা অনেক বিস্তৃত হয়েগেছে। এখন শুধুমাত্র সংবাদপত্র ও ইলিকট্রনিক মিডিয়া নয়, এখন অনলাইন মিডিয়া এত ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, এই বিশাল বিস্তৃতির জায়গাটিতেও আমাদের অনেক দায়িত্বশীলতার বিষয় রয়েছে। কারণ সংবাদপত্র পড়ে মানুষ কিন্তু অনেক কিছু শিখেন। ভাষার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের একটি দায়বদ্ধতার জায়গা রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যটা তুলে ধরা এবং সত্যকে সাহসিকতার সাথে প্রকাশ করা, কোন ধরণের অন্যায়কে আশ্রয় ও প্রশ্রয় না দেয়া। আমি আশাকরি এসব জায়গাগুলোতে চাঁদপুরের সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলতা বঝায় রাখবেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব এর উন্নয়নে যখন যেটা প্রয়োজন আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে। বিগত দিনেও করা হয়েছে এবং আগামীতেও করা হবে।

দীপু মনি বলেন, আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি, আরো অনেক জনপ্রতিনিধি চাঁদপুরে আছেন এবং আমাদের সাথে প্রশাসনের লোকজন কাজ করেন। তাই সাংবাকিদের দায়িত্ব হিসেবে তারা আমাদের অসঙ্গতি ও ভুলগুলো তুলে ধরে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিবেন। চাঁদপুরকে আরো উন্নত করার জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবো।

মন্ত্রী বলেন, অনেক সাংবাকিদের সাথে আমি কথা বলে জেনেছি, নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলে নাকি কাটতি বেশী হয়। মানুষ বেশী খায়। কিন্তু বিষয়টি কেমন হয়। আমি যদি প্রতিদিন সকালে পত্রিকা নিয়ে একটি নেতিবাচক সংবাদ পড়ি, তাহলে আমার সারাদিনের কাজের মধ্যে তার প্রভাব পড়বে। ছোট হলেও যদি একটি ভাল সংবাদ চোখে পড়ে, তাহলে সেটার কারণে আমি অনুপ্রানিত হয়ে কাজ করতে পারবো। তাই আমাদের প্রয়োজন সমাজের ইতিবাচক সংবাদ ও যেসব মানুষ কোননা কোনোভাবে সমাজের মানুষের জন্য কাজ করছেন, তাদেরকে তুলে ধরা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, চাঁদপুরের কৃতি সন্তান ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম।

তিনি বক্তব্যে বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান। আমাকে প্রধান অতিথি নয়, যখনই অতিথি বলবেন, তখনই আমার মনে হয় আমাকের দুরে সরিয়ে দেয়ার কৌশল। সেটিত আমি মানতে পারি না। আমি চাঁদপুরের ছেলে। এখানে আমার আদিনিবাস। এখানে আমার বাপ-দাদার ভিটে রয়েছে। যেজন্য যখনই আমি চাঁদপুরে আসি, চাঁদপুরের বাতাস আমাকে যেন অন্যরকম ভাবে সিহরিত করে। কারণ আমার পিতার পিতারও শৈশব এই মাটিতে কেটেছে। তাদেরই উত্তারিধকার হিসেবে আমি আজ এই পৃথিবীতে আছি। এটি আমার অহংকার ও গর্বের জায়গা। আমি এটি নিয়ে গর্ব করি। আমি ঢাকায় থাকলেও চাঁদপুরকে অনুভব করি, যে আমার শেকড়টা কোথায় গাঁথা।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে সাংবাকিরা তাদের পরিচয় দিয়েছেন ও সাংবাদিকদের মিলন মেলা। আজকে জেলা ও উপজেলার সকল পর্যায়ের সাংবাদিকরা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা এখন মুখোশের মধ্যে বন্ধি। আমরা একে অপরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও বুঝতে পারিনা পরিচয়। পরে বলেন, আমি চলে গেলাম আমাকে দেখলেনও না। পরিচয় দেয়ার পর বুঝতে পারি খুব পরিচিত মানুষ আমার স্বজনরা পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে অনেকে দাঁড়িয়ে এখানে পরিচয় দিয়েছেন। আমার সবগুলো মুখ আজ দেখা হয়নি, সে জন্য আমি কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে আমার মুখোশ খুলে রেখে সাহস করে বক্তব্য দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। আপনারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাকে মার্জনা করবেন।

আজকে সাংবাদিক বন্ধুরা তাদের পরিচয় দিলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা পরিচয় দেননি। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নাই। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আজকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও স্পিকার নারী। চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক নারী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারী ও কিছুদিন পূর্বে সদর উপজেলায় যিনি ইউএনও ছিলেন তিনিও নারী ছিলেন। এর আগে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন নারী। নারীরা এখন পুরুষের সমানে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

সাইফুল আলম বলেন, চাঁদপুরের অনেক সাংবাদিক রয়েছে যারা সারা বাংলাদেশে কৃতিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র চাঁদপুরেই নয়, ঢাকার শহরের পত্রিকা, টেলিভিশন ও অন্যান্য গনমাধ্যমে চাঁদপুরের সাংবাদিকরা নেতৃত্বে দিচ্ছেন। এটি আমাদের একটি গর্ব ও অংহকারের জায়গা তৈরী করে।

আপনারা জানেন আজ থেকে ৬৬ বছর আগে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সাংবাকিতদার যারা মহিরুহ কিংবদন্তী মজিবুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এনায়েত উল্ল্যাহ খান, রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, ইকবাল ছোবহান চৌধুরী। এদের নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয় প্রেসক্লাব গঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, চাঁদপুরের প্রেসক্লাবকে মনে করি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের অহংকার। প্রেসক্লাবটা কি? আমরাকি এটাকে শুধুমাত্র ক্লাব হিসেবে চিহ্নিত করি। এটিকি একটি আনন্দ ও মিলনমেলা। এই বিষয়টাকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখি। আমি দুই বছর জাতীয় প্রেসক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় আমি দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ যখন নির্যাতিত ও বঞ্চিত হয়, প্রতারিত হয় ও ন্যায্যা পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়, তখন মানুষ কার কাছে ছুটে যায়। হয় সাংবাদিকের কাছে কিংবা জতীয় প্রেসক্লাবে ছুটে আসে। কি জন্য যায়! যায় এ জন্য, তার বিশ্বাস ওই জায়গায় গেলে আমি আমার কথাটা বলতে পারবো। ওই জায়গা গেলে আমি আমার অধিকার পিরে পাব।

সাইফুল আলম বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি আসতে পারেননি করোনার কারণে। আজকে তিনি আসলে দেখতে পারতাম। এই করোনার সময় অনেক মানুষকেই দেখতে পারিনা। কাউকে দেখলেই আমার কেন যেন ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। মূলত করোনাকালে আমাদের যে মনেরভাব ও ভালোবাসা সেটি অনেক বেশী জাগ্রত হয়েছে।

প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) গিয়াস উদ্দিন মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল।

রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে করোনাকালীন সময়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করায় চিকিৎসক, নার্স, সংগঠন, সাংবাদিক ও ৫০বছরপূর্তি উৎসব সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এর আগে সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। সাংবাদিক সমাবেশ, সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আলোচনা, সংবর্ধনা, সম্মাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাফেল ড্র ছিলো দিনব্যাপী কর্মসূচি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *