শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

ভোলাহাটে আমের ফলন কম হওয়ায় কাঁদছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৯ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
ভোলাহাটে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আমবিহীন পাতা ভর্তি আম গাছ

গোলাম কবির, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : আমের রাজধানী ভোলাহাটের অর্থনীতির চাকা গড়াতে বছর ঘুরে আসে ফলের রাজা আম। আমের দাম না পাওয়া কিংবা ফলন কম হওয়া নিয়ে বেশ চিন্তায় ফেলে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীকে।

এ বছর আম উৎপাদনের আশা তো নাই নিরাশায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিন গুণছেন চাষি ও ব্যবসায়িরা। এদিকে আম গাছে আম নাই তার উপর করোনা দূর্যোগে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে মৃত্যুর প্রহরগুনা ছাড়া কোন পথ নাই তাদের। গেলো টানা তিন বছর ধরে চলছে আমের দরপতন। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ‘এবার না জানি কপালে কী আছে এমন দুশ্চিন্তা তাড়া করে ফিরছে তাদের’।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলায় মোট ৩হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। উৎপাদিত লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪হাজার ৫৪ মেঃটন। গেলো বছর লক্ষমাত্র ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৪১৭ মেঃটন। এ বছর গাছে গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও অসময়ে বৃষ্টি হলে ধুয়ে মুছে শেষ হয় গুঠি আসা। উৎপাদিত লক্ষ্যমাত্রার ২০শতাংশ আম উৎপাদিত হবে কি-না এমন আশংকায় হতাশ আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আম মৌসুমে ভোলাহাটের একটি মাত্র র্নিধারিত আম বিক্রয় কেন্দ্র আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাটে আম বেচাকেনার সময় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়। বসে ৮৬/৮৭টি আম আড়ৎ। এক একটি আড়তে কাজ করে ২৫/৩০জন শ্রমিক। খাবার হোটেল, ছোট ছোট দোকান, ট্রাক, ভ্যানসহ যুক্ত হয় অনেক কিছু।

আম উৎপাদন না হওয়ায় ভোলাহাটের বিশাল জনগোষ্টি থাকবে বেকার। অভাবের কারণে অপরাধ প্রবনতা বাড়ার আশংকা রয়েছে। আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাটে কোটি কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়। আম এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর আমের উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় মানুষ যেমন বেকার থাকবে তেমনী চাষি ও ব্যবসায়ীরা ঋণগ্রস্থ হবে। এনজিও সংস্থা কিংবা ব্যাংকে নেয়া ঋণের টাকা শোধ নিয়ে পড়তে হবে বেকায়দায়।

বড়গাছী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি ও আম ব্যবসায়ী মিঠু জানান, মৌসুমের শুরুতে আম গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছিল। তবে বৃষ্টির কারণে মুকুল সব নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া পরপর কয়েক বছর আমের দাম না পাওয়ায় বাগান পরিচর্যায়ও এক ধরনের অনীহা ছিল আমচাষিদের। এ বছর ২০ শতাংশ আম গাছে আম এসেছে বলে তিনি জানান।

বজরাটেক গ্রামের আম চাষি বাবুল আক্তার বাবু জানান, তারা আম গাছে এ বছর প্রচুর মুকুল আসলেও গুঠি আসেনি। ফলে তিনি হতাশায় দিনগুনছেন। তার এনজিও সংস্থা থেকে নেয়া ঋণ কি ভাবে শোধ করবেন এনিয়ে হতাশায় রয়েছেন বলে তিনি জানান।

আড়তদার নজরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতি আম মৌসুমে কিছু বেকার ছেলে ও শ্রমিককে তার আড়তে কাজে লাগান। তার আড়ত থেকে তাদের সংসার চলে। কিন্তু এ বছর আম উৎপাদন না হওয়ায় আড়ৎ চালু করা নিয়ে শংকায় আছেন। তিনি জানান, মৌসুমে তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করেন। এ বছর ব্যবসা হবে বলে জানান।

খাবার হোটেলের একাধিক মালিক জানান, এ বছর আম না হওয়ায় তাদের খাবার হোটেলগুলো নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। তারা জানান, আম মৌসুমে তাদের হোটেলে বেচা বিক্রি বেশী হয় ফলে পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে।

‘আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাট এর সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোজাম্মেল হক চুটু বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরে আমের উৎপাদন চার ভাগের এক ভাগ হবে। আম গাছে প্রচুর মুকল আসলেও বৃষ্টির কারণে মুকুল ঝরে যায়। ফলে আম গাছে গুঠি আসেনি। ফলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা ও আশঙ্কা বিরাজ করছে।

ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমের গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিলো। কিন্তু গুঠি আসার সময় বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গুঠি আসতে পারেনি।

গাছে গাছে শুধু নতুন পাতা গঁজিয়েছে। আম উৎপাদন কম হওয়ায়র কারণ হলো বৈরিআবহাওয়া। আমরা আমের যে লক্ষমাত্রা ধরেছি তা অর্জন সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলোনায় এবার ২৫শতাংশ আম লক্ষমাত্রা হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *