শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার । বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমশই অগ্রগতি অর্জনের পথে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফল আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এগিয়ে।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার গত এক দশকে ৫-এর ঘর থেকে ৮-এর কাছাকাছি উঠে এসেছে। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার জন্য প্রশংসিত হচ্ছে বর্তমান সরকার। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় মাথাপিছু আয় নির্ধারণ করা হয় তাতে করে প্রকৃতপক্ষে দারিদ্র্যের নিম্নে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা ও তাদের প্রকৃত আয় সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এতে করে অর্থনীতিতে তীব্র আয়বৈষম্য দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর হিসাবে গত নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই তথ্যমতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে তীব্র আয়বৈষম্য অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের বহু দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করে ব্যক্তিগত মোটরযান ভাড়ায় যাত্রীবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের দেশে রাইড শেয়ারিং সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। উবার, পাঠাও, সহজ, পিকমি ও ওভাইসহ অনেক অ্যাপ এই সেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
১৮ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর এই শহরে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে, বেকার সমস্যা সমাধানে ও দেশের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে এই সেবাখাত অবদান রাখতে শুরু করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদের শেষ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন, “অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাখাত থেকে এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে”।
বর্তমানে এই সেবাখাত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে প্রায় ৩ হাজার স্নাতকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণ ও তাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
নিরাপত্তা ও কল্যানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং সেবা খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে “রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা– ২০১৭” প্রণয়ন করে সরকার। সরকার ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখে এই নীতিমালা অনুমোদন করে যা ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। জনস্বার্থে জারিকৃত এই নীতিমালা ৮ মার্চ ২০১৮ তারিখ হতে কার্যকর রয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বর্তমান রাইড শেয়ারিং মার্কেট এক বছরে ২২শ’ কোটি টাকার বাজার ও পুরো ট্রান্সপোর্টেশন সেক্টরে ২৩ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে।
যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩.২ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক সমীক্ষা মতে ঢাকায় গড় গতি ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার। যা প্রাইভেট কারে ১২ কিমি এবং মোটরসাইকেলে ১৬ কিমি। ১ কোটি ৮০ লাখ জনগোষ্ঠীর এই শহরে রাইড শেয়ারিং সেবা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক মনে করা হচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি সূচকের মধ্যে প্রধান ২টি সূচক হচ্চে ১. নো প্রভার্টি ২. জিরো হাঙ্গার! অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে একজন মানুষও দারিদ্র্যের নিচে বসবাস করবে না এবং একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না! যেহেতু এমডিজি ছিল সহায়তা নির্ভর সেক্ষেত্রে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ ছিল। কিন্তু এসডিজি যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নে করতে হবে সেহেতু সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। নতুবা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রচুর বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় অ্যাপভিত্তিক পরিবহন এই সেবা খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার যদি সহায়তা করে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এ খাতের বিকাশের জন্য যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করে তাহলে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে পাশাপাশি তীব্র আয়বৈষম্য কমে অর্থনীতি বিকাশমান হবে।
আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশে যানজট নিরসন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ছিল সময়ের দাবি। মেট্রোরেল (এমআরটি), বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল রেল, সড়ক বহুমুখীকরণ সহ বর্তমানে দেশে অবকাঠামোগত যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে সেখানে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতার বিচারে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস এক বিশাল সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দরকার একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা যা এই খাতে টেকসই উন্নয়ন এনে দেবে।
লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার বিজনেস অপারেশেনস,পিকমি লিমিটেড