নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০১৭: এখনো এলো না তিস্তার পানিবাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে দিল্লি ও কলকাতায় এখন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি বিরাজ করছে। প্রায়ই বিভিন্ন উপলক্ষ্যে তার প্রকাশ দেখা যায়। গত এক দশকে করিডোর আকারে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মতো প্রত্যাশিত সকল কিছুই ভারত পেয়েছে।
এসব পাওয়ার প্রক্রিয়ায় ভারতের নীতিনির্ধারক ও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সময় এরকম বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে পানি জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রয়োজনে করিডোর সুবিধা দিয়ে হলেও ভারতের সঙ্গে পানি বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত। বিশেষত তিস্তার পানি নিয়ে। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। বাংলাদেশে স্থল ও নৌপথে ভারত বহুমুখী যোগাযোগ সুবিধা পেয়ে গেছে। বিনিময়ে কথিত পানি বাংলাদেশ পায়নি। এমনকি তিস্তা পানিচুক্তি কবে হবে কেউ জানে না।
ঢাকায় প্রচারমাধ্যমে মাঝে মধ্যে খবর বের হয় ‘শিগগির তিস্তা চুক্তি হচ্ছে।’ এরূপ খবর প্রকাশিত হয় সাধারণত ভারতীয় তরফ থেকে নতুন কোন এজেন্ডা সামনে এলে এবং তা বাংলাদেশের অনুমোদনের প্রশ্ন তৈরি হলে। আর কাক্সিক্ষত বিষয়টি অনুমোদন হওয়া মাত্র তিস্তাপ্রশ্ন আবার হিমাগারে চলে যায়। কিন্তু সামনে আরেকটি শুষ্ক মওসুম আসন্ন। ধান আবাদের সময় এলো। বৃহত্তর রংপুরে চাষীরা জানে না- আদৌ সেচের পানি পাবে কি না।
অতীতে দেখা গেছে, ভারত কর্তৃক তিস্তার পানি না দেয়ার ক্ষেত্রে যৌক্তিক ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলী প্রচারণা চালিয়েছে। এখন এইরূপ এক প্রচার কৌশল চলছে যে- মূলত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কারণে ভারত বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দিতে পারছে না।
বাস্তবে নরেন্দ্র মোদি বা তার আগে ড. মনমোহন সরকার ভারতের চারপাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ডজন ডজন চুক্তি করলেও কোথাও এমন দেখা যায়নি, তাদের কোন রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী এসব চুক্তিকালে প্রবল আপত্তি তুলেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে যখন কোন বিষয় দেয়ার প্রশ্ন আসে তখন দেখা যায়, দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গীকারের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে দূরবর্তী নানান আপত্তি, বাধা ও অজুহাত।
বস্তুত দিল্লির এসব কৌশলী অবস্থানের সম্পূরক হিসেবেই বর্তমানে কলকাতায় তিস্তার পানি ভালো একটা রাজনৈতিক ইস্যু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন, তিস্তায় বাংলাদেশকে দেওয়ার মতো ‘বাড়তি জল’ নেই। নতুন সমীক্ষা ছাড়া কোনোমতেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার প্রবাহ নিয়ে চুক্তি করা যাবে না। অথচ ভারত করিডোর পাওয়ার আগে ২০১১-এর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা চুক্তির জন্য ‘প্রয়োজনে মমতার একগুয়েমিকে অগ্রাহ্য’ করার হুমকি দিয়েছিলেন।
যোগাযোগ সুবিধার বিষয়গুলো ফয়সালা হওয়া মাত্র বলা হলো, নতুন সমীক্ষা শেষেই কেবল ভারত সিদ্ধান্ত নেবে তিস্তার প্রবাহে কোনো ‘বাড়তি জল’ আছে কি না এবং বাংলাদেশকে ‘আদৌ কোনো জল দেয়া যায় কি না!’ তবে এমন আশাবাদও জিইয়ে রাখা হয় যে, নতুন সমীক্ষা শেষের আগেও অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হতে পারে। এইরূপ আশাবাদ জিইয়ে রাখার প্রধান কারণ ছিল- প্রতিনিয়তই ভারতের নানান প্রস্তাব আসছে বাংলাদেশে এবং তা অনুমোদনের প্রশ্ন রয়েছে!
তিস্তার প্রবাহ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এইরূপ বিবিধ কৌশলেই ছাপ পড়েছে কলকাতায়। সর্বশেষ মমতা সরকার জানিয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের কতটা জল দরকার, বাংলাদেশের কতটা জল দরকার- তা নির্ণয় করা দরকার। এর জন্য কারিগরি ও আর্থসামাজিক সমীক্ষা প্রয়োজন। সেই কাজ চলছে।’
আন্তর্জাতিক নদীর পানি নিয়ে ভারতের এমন কৌশল বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। তারপরও তিস্তার পানি নিয়ে একদা সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া বিনিময়ের পর এখন নতুন সমীক্ষার কথা বলা হচ্ছে- যা পুরানো অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার কৌশলী অবস্থান মাত্র। বলা বাহুল্য, তথাকথিত সমীক্ষার আগে যেমন তিস্তার পানি নিয়ে আর চুক্তি হবে না- তেমনি সমীক্ষার পরও ভারত হয়তো এমন এক প্রস্তাব দেবে যা বাংলাদেশের তরফ থেকে চুক্তি স্বাক্ষর কঠিন করে তুলতে পারে।
ভারত ও বাংলাদেশের সরকারই এ মুহূর্তে গভীর বন্ধুত্বের কথা জানাচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অমিমাংসিত সমস্যার তালিকায় বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো মিমাংসিত হচ্ছে সামান্যই। এর মাঝে আছে সীমান্তে মানুষ হত্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, ভারতের অভ্যন্তর দিয়ে নেপালে বাংলাদেশের ট্রানজিট পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক নদীগুলোর হিস্যার পানির বিষয়।
বিশেষভাবে স্থল ও নৌ যোগাযোগ পাওয়ার বিনময়ে ভারত তিস্তার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছিল। কারণ বিশেষ কোন ছাড় ছাড়াই এই চুক্তিটি করা সম্ভব ছিল তাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দিল্লির মানসিকতায় এমন পরিবর্তন ঘটে গেছে যে, আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ন্যূনতম পানিও তারা আর এদেশকে দিতে অনিচ্ছুক। সামগ্রিক অবস্থায় এটা বলতেই হবে যে, তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান করতে না পেরে দুই দেশ প্রকৃতই কূটনীতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ব্যর্থতার পাল্লা এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশি ভারী। কারণ তিস্তায় পানি পাওয়া যাবে জনগণের মাঝে এই প্রত্যাশা তৈরি করে গত এক দশকে ভারত চাহিদামত সব সুবিধাই একে একে নিয়েছে। কিন্তু ড. মনমোহন এবং মোদির সফরকালেও চূড়ান্ত মুহূর্তে তারা তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষর না করে পিছু হটে যায়। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় দীর্ঘসময় পার করেছে- সামনে সেদেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। ফলে এখন আর পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি নিয়ে এই চুক্তি করা তাদের পক্ষে কতটা সম্ভব সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
আঞ্চলিক নদীগুলোর পানিবণ্টন আলোচনায় কূটনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রকৃতই এখন বেশ পিছু হটে গেছে। এতোদিন সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলেও দুদেশের আলোচনায় পানির সংকট থাকতো এক নম্বর বিষয়। সেই অগ্রাধিকার পাল্টে এখন আলোচনার টেবিলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয় হয়ে উঠেছে ভারতের জন্য যোগাযোগ সুবিধা ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকল্প। এতে বাংলাদেশের সরাসরি স্বার্থ জড়িত থাকে সামান্যই।
এর আগে দীর্ঘসময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জুড়ে ছিল ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। সেটার ফয়সালার পর আলোচনার এজেন্ডায় আধিপত্য বিস্তার করে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক বিষয়। দুদেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে গত ৬ বছরের বৈঠকগুলো অনুসরণ করলে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত যা হচ্ছে সবই ভারতের বাণিজ্যিক ও ভূ-কৌশলগত নিরাপত্তার স্বার্থে। আর পরবর্তী এজেন্ডাগুলোর ক্ষেত্রে (সীমান্ত হত্যা, পানি, বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি) কেবল ‘আশাবাদ’ ব্যক্ত করা হচ্ছে। কূটনীতির ভাষায় যা শুধুই বাস্তব তাৎপর্যহীন একটি শব্দ মাত্র।
এটা সকলেরই জানা, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ পর্যন্ত পানি বিষয়ে একমাত্র চুক্তি হয়েছে গঙ্গার প্রবাহ নিয়ে। ১৯৯৬-২০০১ সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ বিষয়ে সর্বশেষ চুক্তি হয়। এটা ছিল সে সময়কার সরকারের একটা সফলতা। সেই ইতিহাসের আলোকে কূটনীতিবিদরা ভেবেছিলেন, পানি আলোচনায় এবারের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এক ধাপ অগ্রগতি ঘটবে, বিশেষত তিস্তার পানি নিয়ে। কিন্তু ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, ২০১১ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এবং এরপর সর্বশেষ নতুন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পরও এরূপ কোনো চুক্তি হয়নি।
এখন পরিস্কার যে, আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানিতে ভারত আর বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার স্বীকৃতি দিতে চায় না। ট্রানজিট সুবিধা পাওয়ার পরও ভারতের এই মনোভাবকে বাংলাদেশের অনেক মানুষ দেখছে অন্যায্য মনোভাব হিসেবে। তবে বর্তমানে উভয় দেশে উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সফরকালে প্রতিনিয়তই বলা হয়, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।’
সেই ‘নতুন অধ্যায়ে’ও পানি বিষয়ক ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা অববাহিকায় তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মাঝে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরের পর কূটনীতিকরা দেশবাসীকে এটা বলতে দেরি করেননি, ‘দুদেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে।’ কিন্তু ২২টি চুক্তি হলেও তাতে পানি ছিল না!
আন্তর্জাতিক নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। নীলফামারী দিয়ে এ দেশে ঢুকে কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা অঞ্চলে যমুনার সঙ্গে মিশে যাওয়ার পূর্বপর্যন্ত তিস্তা প্রায় ৮৩ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছে। তিস্তার অববাহিকার আয়তন প্রায় ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং এর প্রায় ১৭ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু মানুষের হিসেবে চিত্রটি অন্য রকম। পুরো তিস্তা অববাহিকায় বসবাসরতদের ৫০ শতাংশই বাংলাদেশের মানুষ।
সর্বশেষ শুষ্ক মৌসুমের অভিজ্ঞতা হলো- বাংলাদেশে তিস্তার প্রবাহ কখনো কখনো কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ কিউসেকে (কিউসেক = প্রতি সেকেন্ডে এক ঘন ফুট)। অথচ পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে শুকনো মৌসুমে অন্তত তিন হাজার ২০০ কিউসেক পানি বইতে দেয়া জরুরি। সীমান্তের প্রায় ৫০ মাইল উজানে ভারতের গজলডোবায় নির্মিত ২১১.৫৩ মিটারের একটি ব্যারাজের মাধ্যমে একপাক্ষিক পানি প্রত্যাহারের কারণেই এই দুঃসহ অবস্থা।
প্রচারমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গজলডোবার ব্যারেজের দুটি সেচ খালের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে প্রায় নয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তিস্তার পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে-পশ্চিমে মহানন্দা, মেচি, পুনর্ভবা, আত্রাই ইত্যাদি অববাহিকায় এবং তা শুষ্ক মৌসুমেও।
শুষ্ক মৌসুমে ভারত প্রায় ৮৫ শতাংশ পানি প্রত্যাহার করে নেয় তিস্তার প্রবাহ থেকে। ১৯৮৭ সাল থেকে এইভাবে পানি প্রত্যাহার চলছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আগেই পানি প্রত্যাহার করে তারপর বলা হচ্ছে তিস্তায় বাংলাদেশকে চুক্তি করে দেয়ার মতো আর পানি নেই। এতে ভাটিতে ভারতের কুচবিহারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাস্তবে এভাবে পানি প্রত্যাহার চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে শর্তেই চুক্তি হোক-বাংলাদেশ তাতে ন্যায্য হিস্যা পাবে না।
ভারতীয়দের তিস্তা প্রকল্পে জলঢাকা, তিস্তা, মহানন্দা ও ডাউক নদীকে খাল দিয়ে যুক্ত করার কথাও আছে। অথচ প্রত্যেক নদীর অববাহিকার পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা সেই নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে- এটাই পানি ব্যবস্থাপনায় বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক বিবেচনা। যদিও এই রীতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক কোনো আইন ছিল না এতোদিন। বাধ্যবাধকতার কাঠামোও গড়ে ওঠেনি। অতিসম্প্রতি কেবল এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি ঘটেছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন তৈরি হয়েছে এখন। তবে অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ বিষয়টির সুরাহায় আন্তর্জাতিক সেই আইনী ম্যাকানিজম ব্যবহার করছে না।
একদা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ সরকারের। এখন কার্যত ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ সেচের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হার মাত্র এক দশমাংশ। প্রকল্পের কেবল প্রথম পর্যায়ের এক লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পাঁচ হাজার কিউসেক পানি দরকার। কিন্তু সর্বোচ্চ পাওয়া যায় দুই থেকে আড়াই হাজার কিউসেক। এটাও অনেক সময় কমে যায়। তখন কৃষক গভীর নলকূপ থেকে পানি তোলে। তার জন্য বিঘাপ্রতি ধান আবাদে খরচ বেড়ে যায় তিন থেকে চার হাজার টাকা।
অথচ তিস্তার পানির জন্য দিতে হয় বিঘাপ্রতি ১৬০ টাকা। এই হিসেব থেকে দেখা যায়, কেবল তিস্তার পানি বঞ্চনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ কৃষকের শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা ঢাকায় এক কনভেনশনে নিজস্ব তদন্তের ফলাফল তুলে ধরে দাবি করেছে, কেবল এক মৌসুমে তিস্তার পানি না পেয়ে অত্র অববাহিকার ১২টি উপজেলায় চাষিদের ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ মৌসুমেও কী একইভাবে ক্ষতির বোঝাই বইবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ?
আলতাফ পারভেজ : দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক।