নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : মহান একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সৌদি আরব নজরুল একাডেমির এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্ নজরুল গবেষণার জন্য এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি রাতে দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে নজরুল একাডেমি সৌদি আরবের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। এসময় দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং রিয়াদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশিত একাডেমি সংক্রান্ত একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন সৌদি আরব নজরুল একাডেমির সদস্যরা। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষার মহান শহিদদের স্মরণে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রিয় নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমানের পাঠানো এই চিঠি হস্তান্তর করেন তারা। চিঠি হস্তান্তরে নজরুল একাডেমি সৌদি আরবের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও সভাপতি ড. নুরুন্নবীর সঙ্গে এসময় কেন্দ্রিয় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসভাপতি ডাক্তার কাজী মাসুদও উপস্থিত ছিলেন।
এসময় রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে নজরুল একাডেমি আরব দুনিয়ায় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিসমূহ ছড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তাতে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ অঞ্চলে আরবি ভাষায় নজরুলের সাহিত্য, সংগীতমালা অনুদিত করে একটি বড় ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কেননা, নজরুল সৃষ্টিতে ইসলামী মূল্যবোধের উপকরণগুলি আরবি ভাষাভাষী এ অঞ্চলের নাগরিকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সহজ হবে।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ সৌদি আরবে নজরুল গবেষণার জন্য সব রকম সহায়তা করবেন উল্লেখ করে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য সৌদি আরব শাখাকে পাঁচ হাজার সৌদি রিয়াদ (১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা) অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি নজরুল একাডেমির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগ অসাধারণ যা আমাদের মাথায় কখনোই ছিল না। তাই নজরুল একাডেমি সৌদি আরবের এ ধরণের উদ্যোগকে সহযোগিতা দিয়ে আমরাও ইতিহাসের অংশ হতে চাই।
অনুষ্ঠানে উপমিশন প্রধান ড. নজরুল ইসলাম ও ইকনোমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসানকে একাডেমির পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ড. নজরুল ইসলাম তাঁর ভাষণে সৌদি আরব নজরুল একাডেমির ২০১৯ সালের ৪ জুলাই উদ্বোধনীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন এই একাডেমি উদ্বোধন করতে যেতে আমার নানার কথা মনে পড়ছিল কেননা বড় হয়ে আমি জানতে পেরেছিলাম আমার নাম নজরুল ইসলাম নামকরণ করেছিলেন তিনি। বৃটিশ ঔপনিবেশ আমলে কাজী নজরুলের প্রতি আমার নানার অগাধ ভালোবাসা এবং গভীর অনুরাগ থাকার কারণেই হয়তো তিনি আমার নাম নজরুল ইসলাম রেখেছিলেন।
ড. নজরুল আরো বলেন, আরব দুনিয়ায় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে আরবি ভাষায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা যে যেখানে থাকি না কেন, স্ব স্ব অবস্থান থেকে সহযোগিতা করা দরকার। কেননা, নজরুল সৃষ্টির কাছে আমরা সবাই কমবেশি ঋণী।
প্রসঙ্গত, ড. নজরুল ইসলাম সৌদি আরব থেকে উপমিশন কর্মকর্তার পদবী অতিক্রম করে বিদায় নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে যাচ্ছেন। ড. নজরুল বলেন, বাহরাইনে নজরুল একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সেখানকার বাঙালি কম্যুনিটিকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী ইকনোমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসান সৌদি আরবে নজরুল একাডেমি গঠনকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু কাজ আছে যা খালি চোখে স্থুল দেখা গেলেও এর গভীরতা অনেক সূক্ষ্ম। সৌদি আরবে নজরুল একাডেমি সে রকমই একটি সূক্ষ্ম অনুভূতির কাজটি করেছে যা আরবি ভাষায় নজরুল সৃষ্টির সম্ভাবনাকে অতি সূক্ষ্মভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তিনি রিয়াদে ইংরেজি শাখাস্কুলে নজরুল একাডেমির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশেষ সহযোগিতার প্রস্তাব রাখবেন বলে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে নজরুল একাডেমি সৌদি আরবের সভাপতি প্রিন্স সুলতান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নুরুন্নবী রাষ্ট্রদূতের কাছে নজরুল গবেষণার জন্য দূতাবাসে একটি স্থান সংকুলান করার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়া প্রবাসী প্রজন্মদের নজরুল চর্চার ব্যবস্থা করার জন্যও রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা চান।
আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একাডেমির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসা খান বাবু।
সংগীতে অংশ নেন বাবুল চৌধুরী, সফিক সিদ্দিকী, মোস্তাক আহমেদ মণ্ডল, তানজিমা বেগম লিমা, ডাক্তার আশা, কবি শাহিনূর, শাহানা চৌধুরী পপি ও সাখাওয়াত ইকবাল। কবিতা-শ্রুতি পরিবেশন করেন রুচিরা সুলতানা সুইটি ও সাখাওয়াত ইকবাল। ধারা বর্ণনায় ছিলেন আমির ফয়সাল ও রুচিরা সুলতানা। নৃত্য পরিবেশন করেন তন্বী ও লাইবা।