বলতে গেলে বাংলাদেশের বই প্রকাশনা এখন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। বইমেলাকেন্দ্রিক যেমন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তেমন এক শ্রেণির লেখকও গড়ে উঠেছে। কিছু প্রকাশক আছেন সারা বছর যে বই প্রকাশ করেন তার সবগুলোরই প্রকাশকাল দেন একুশে গ্রন্থমেলা! এতে মনে হয়- ‘বই প্রচার ও প্রসার’র যে বোধ থেকে একুশে গ্রন্থমেলার শুরু হয়েছিল, আমরা সেখানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি।
বিগত কয়েক বছরের মেলার থেকে এবারের সার্বিক বিন্যাস ভালো হয়েছে। তবে এক ইউনিটের অধিকাংশ স্টল বিন্যাসের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে মনে হয়। ৬৯৮ নম্বর স্টল থেকে পরের যে স্টলগুলো আছে সেই লাইনটা, অর্থাৎ পূর্বদিকে সর্বশেষ লাইনটার বিন্যাস যদি কেউ দেখেন তাহলে অসঙ্গতিটুকু চোখে পড়বে। অথচ তার পেছনে আরও জায়গা ছিল, মুখোমুখি দুই লাইনের পরিসর বাড়ানো যেত, তা না করে খাবারের দোকানগুলোকে বেশি জায়গা দেওয়া হয়েছে। যে খাবারের সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যের কোনো সম্পৃক্ততা নেই! এতে চেতনার দিক থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে খাটো করা হয়েছে। খাবারের দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বাঙালি ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার দরকার ছিল।
মেলার দ্বিতীয় সপ্তাহেও বিক্রির প্রত্যাশার জায়গা থেকে বলা যায় তেমন একটা জমে উঠেনি মেলা। পাঠক-ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর ভিড়টাই চোখে পড়ে। যার প্রমাণ মিলবে দিনদিন দর্শনার্থীর আনাগোনা বাড়লেও কমেছে বই ক্রেতার সংখ্যা। ফলে মেলায় দর্শকদের সংখ্যা বাড়লেও তাদের সম্পৃক্ততা নেই বই কেনাকাটার সঙ্গে। বইমেলা এখন আর শুধু বই প্রকাশ, কেনাবেচা বা লেখক, প্রকাশক, পাঠকদের দেখা হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মানুষ আসেন কারণে-অকারণে। সাজানো-গোছানো বইমেলায় দর্শকরা ঢুকছেন পরিপাটি বেশে, তারা অধিকাংশ স্টলে আসেনই আসেন না, বই কেনা তো দূরের কথা।
এবার মূল আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবছর ‘মুজিববর্ষ’কে কেন্দ্র করে বইমেলার স্টলসজ্জা ও রেকর্ডসংখ্যক বই প্রকাশ। শুদ্ধপ্রকাশ থেকে আসছে- মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান’র ছোটদের বঙ্গবন্ধু, জীবন ইসলাম’র বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি, সহিদ রাহমান’র মহামানবের দেশে, মাসুদুল হক’র আদিবাসী কবিতায় বঙ্গবন্ধু। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বইগুলো হল- রামেন্দু মজুমদার, মাকিদ হায়দার ও লুৎফর রহমান রিটন’র আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থমালা কিশোরবেলা; রাজনৈতিক নিবন্ধ ফিরোজ আহমেদ’র নাম বললে চাকরি থাকবে না, শফিক হাসান’র সাহিত্যবিষয়ক বই নীতি কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ; মৃত্তিকা দেবনাথ’র পেঁয়াজ ছাড়া রান্না-বান্না।
বইমেলার বিক্রি-বাট্টা নিয়ে একজন প্রকাশক হিসেবে আমি সন্তুষ্ট নই। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা বর্ধিতকরণের আবেদন জানাচ্ছি।