ডেস্ক রিপোর্ট:
রংপুরের বদরগঞ্জের কুতুবপুর অরুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজে কলেজের শিক্ষক সেলিম শাহের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেনির এক ছাত্রীকে মোবাইলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ম্যাসেজিং করাসহ ইভটিজিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনদিনের চিকিৎসা ছুটি নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন ওই শিক্ষক। তবে পুলিশ সুপার বলছেন, মামলা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী বদরগঞ্জের কুতুবপুর অরুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেনির ছাত্রী জানান, বেশ কিছুদিন থেকে স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সেলিম শাহ আমাকে রিলেশন করার জন্য প্রস্তাব দেয়। তখন আমি তাকে বলি আমার ফুফাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমাকে উত্যক্ত করবেন না। তারপরেও ওই শিক্ষক আমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে প্রতিদিনই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ম্যাসেজ দিতে পারে। আমি উত্তর না দিলেও তিনি আমাকে পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে উত্তর দিতে বাধ্য করায়। তিনি আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার বাসা ও বিভিন্ন স্পটে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পরি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে আমার মানসিক পরিস্থিতি দেখে আমার বড় ভাবি আমার ফোনটি নিয়ে ম্যাসেজগুলো দেখেন। তখন আমি বিষয়টি খুলে বলি। একজন শিক্ষক হয়ে তিনি আমাকে এভাবে অসামাজিক কাজের যে প্রস্তাব দিয়ে আমাকে যেভাবে ভয়ের মধ্যে রেখেছেন তাতে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এ ঘটনায় আমি উপযুক্ত বিচার চাই।
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাই হাসান জানান, বিষয়টি আমি আমার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তারা কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আমি বিষয়টি ইউএনওকে জানাই। তিনি আমাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। আমি মঙ্গলবার দুপুরে থানায় অভিযোগ করি। সেসময় থানায় পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। আমি বিষয়টি তাকে জানাতে চাইলে ওসি তাতে বাধা দেন। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ওসি মামলা গ্রহণ করেন নি। এতে আমরা অত্যন্ত সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমরা এ ঘটনার আইনগত পদক্ষেপ কামনা করছি।
কুতুবপুর অরুন্নেছা স্কুলের ছাত্র জুনায়েদ জানান, সেলিম শাহ স্যারের বিরুদ্ধে শুধু এটা ঘটনাই প্রথম নয়। তিনি এর আগে ৫-৬ জন ছাত্রীর সাথে এ ধরনের ভুল কাজটি করেছিলেন। তার ভুলের বিচার হওয়া উচিত। অপর শিক্ষার্থী মুনির জানান, স্যারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এর আগেও তিনি একই কাজ করেছেন। কিন্তু ব্যবস্থা না নেয়ায় আবারও একই কাজ করেছেন।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র জুনায়েদ জানান, আমরা যখন বাড়িতে থাকি তখন আমাদের পিতা-মাতা আমাদের অভিভাবক থাকেন। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন যাই তখন শিক্ষকরা আমাদের পিতা হন। কিন্তু একজন পিতার মত শিক্ষক যদি কন্যার মতো ছাত্রীর সাথে এ ধরনের নোংরা কাজ করেন। আবার তার পক্ষে যখন স্কুল কর্তৃপক্ষ থাকে। পুলিশ থাকে। তখন আমরা হতবাক হয়ে যাই। আমরা চাই এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
গ্রামবাসী ছলিম উদ্দিন জানান, একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের নোংরা কাজ করে তিনি কি শেখাবেন মানুষকে। তার বিচার হওযা উচিত।
সেলিম শাহের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়িতে নেই। তার মা রশিদা বেগম জানিয়েছেন, সেলিম শাহের স্ত্রী ও দুইটি সন্তান আছে। আমার ছেলে ভালো। তাকে ফাঁসানোর জন্য ওই মেয়ে ষড়যন্ত্র করে এসব করছে।
সেলিম শাহের স্ত্রী জানান, ওই ছাত্রীকে এ ধরনের ম্যাসেজ দেয়া ঠিক হয় নি। শারীরিক অসুস্থতার কারনে আমার স্বামী সাত দিনের ছুটি নিয়েছেন। ডাক্তার পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছেন। আমার স্বামী বাড়িতেই আছেন।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে ওই শিক্ষক স্কুলের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে টনসিলের ব্যাথার নামে চিকিৎসা ছুটি নিয়ে সটকে পড়েছেন।
এ ব্যপারে মঙ্গলবার রাতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আহমদ আলী শাহ জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও এধরনের অভিযোগ উঠলেও সে ব্যবাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। আর এ বিষয়টি এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয় নি। তবে শুনেছি বিষয়টি নিয়ে একটি জিডি হয়েছে। ওসি আসার কথা রয়েছে।
ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছুটি দেয়ার এখতিয়ার নেই। সেলিম শাহ তিনদিনের চিকিৎসা ছুটির জন্য আবেদন করেছেন, সভাপতি আমাকে মোবাইল ফোনে আমাকে আবেদন নিয়ে রাখেন পরে আমি সই করবো। ওইভাবেই সে স্কুলে আসছে না। এখানে আমার করার কিছুই নেই।
এ ব্যাপারে রংপুর পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি জানার পর আমি বদরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি মামলা নিয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, এসপি স্যারের নির্দেশে আমরা সেলিম শাহের বাড়িতে মঙ্গলবার রেড দিয়েছিলাম। তাকে পাওয়া যায় নি। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর ভাই বাদি হয়ে যে অভিযোগটি দায়ের করেছেন সেটি মামলা হয় না, সেকারণে তাকে এজহার পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা আসেননি।