মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

অভিনব করোনা ইজিবাইক: ঝিনাইদহের সেই নয়নকে খুঁজছে ভারতের মাহিন্দ্র গ্রুপ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪৫ পাঠক
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

জাহিদুর রহমান তারিক, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ঝিনাইদহ : করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে যখন গণপরিবহন বন্ধ, তখন সংসার চালানোর তাগিদে ইজিবাইক বা রিকশা নিয়ে সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। জেলা শহর গুলোতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা ভিন্ন কোনো পন্থায় তারা চালাচ্ছেন তাদের বাহন। তবে ঝিনাইদহের নয়ন হোসেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহনের জন্য অভিনব পন্থায় নিজের ইজিবাইকের রুপান্তর ঘটিয়ে আলোচনায় এসেছেন। সাধারণত আটজন যাত্রী বহনের ইজিবাইকটিকে তিনি চারটি আলাদা ভাগ করেছেন। চারজন করে যাত্রী বহন করছেন তিনি। চার ভাগের মধ্যে পার্টিশন থাকায় কোনো যাত্রীর সঙ্গে অন্য যাত্রীর শারীরিক সংস্পর্শ হচ্ছে না। একজনের হাঁচি-কাশি থেকেও নিরাপদে থাকছেন অন্যরা।

নয়নের এই অভিনব আবিষ্কার ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাহবা দিচ্ছেন অনেকে। অনেকেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন নয়নের এই সময় উপযোগির উদ্ভাবনের জন্য। তবে ভারতের অটোমোবাইল কোম্পানি মহিন্দ্র গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্র এই আবিষ্কারে এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে, তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে চাইছেন নয়নকে। শুক্রবার আনন্দ মহিন্দ্র নয়নের ইজিবাইকের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন নিজের টুইটারে। সেখানে তিনি তার কোম্পানির অটো অ্যান্ড ফার্ম সেক্টরের নির্বাহী পরিচালক রাজেশ জেজুরিকার বলেছেন, আমাদের রিসোর্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট টিমে তাকে (নয়নকে) একজন পরামর্শক হিসেবে দরকার। আনন্দ মহিন্দ্রের ওই টুইটটি রাত ৯টা পর্যন্ত ১৮ হাজার মানুষ পছন্দ করেছেন। রিটুইট (শেয়ার) হয়েছে প্রায় চার হাজার।

ঝিনাইদহের পায়রাচত্বরে কথা হয় সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক নয়ন হোসেনের সঙ্গে। নয়ন জানান, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরে ইজিবাইক নিয়ে বাইরে বের হলে পুলিশ সমস্যা করে বলে প্রথম কয়েক দিন বাড়িতেই বসে ছিলেন। ইজিবাইকের ভেতরে অনেক মানুষ একসঙ্গে বসেন বলে সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেছেন নিজেও। কিন্তু কয়েক দিন যেতেই টান পড়তে সংসারে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। হঠাৎ করেই তার মাথায় আসে আলাদা আসন তৈরির চিন্তা। নয়ন বলেন, চিন্তা আসার পরই কাজে লেগে পড়ি। এক সপ্তাহের মধ্যেই তৈরি করে ফেলি পৃথক চার আসনের গাড়ি। তিনি জানান, অভিনব এই পদ্ধতির কারণে বেড়েছে তার আয় রোজগার।পুলিশও ঝামেলা করছে না এখন।

ইজিবাইকে ওঠা যাত্রী বসির আহাম্মেদ বলেন, যে পদ্ধতিতে ইজিবাইক তৈরি করা হয়েছে সত্যিই বর্তমান সময়ের জন্য উপকারী। একজন যাত্রী অন্যজনের সংস্পর্শে আসছে না। কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছে না।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম বলেন, রফিকুল ইসলাম নয়ন যে পদ্ধতিতে ইজিবাইক তৈরি করেছে তা প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে মাঝখান দিয়ে যা দেওয়া হয়েছে তা ফিল্টারের কাজ কিছুটা করবে। এ ক্ষেত্রে কাচ বা আরও ভালো কিছু দিলে ভালো হবে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, অভিনব কায়দায় ইজিবাইক রুপান্তর করে নয়ন আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাকে প্রশাসকের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তার কাজ অন্যান্যের উৎসাহিত করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *