মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন

আইভী-শামীমকে ঢাকায় তলব

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪৩ পাঠক
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বৃহস্পতিবার,১৮ জানুয়ারী ২০১৮: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও চার আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার ফুটপাথে হকার বসানো নিয়ে সংঘর্ষের পর রাতেই বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল বুধবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেই তাদের ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। তবে কখন, কোথায় দুজনের সঙ্গে আলোচনা হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। এ ছাড়া এই দুজনের দ্বন্দ্ব মেটানোর বৈঠকটি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই হবে না কি দলীয় অন্য কোনো ফোরামে হবে তা জানা যায়নি।

গত মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষে মেয়র আইভী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও শহরে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। শামীম ওসমান ও আইভীকে ফোন করে শান্ত থাকতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সংঘর্ষের পর গতকাল নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও আইভী পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আর ফুটপাথ নিয়ে সংঘর্ষের একদিন পরেই আবার সেখানে হকারদের বসার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, ২০১১ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আইভীর কাছে হেরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান শামীম ওসমান। এরপর ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও তাদের দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে তাদের ডেকে পাঠানো হয়, সতর্ক করা হয় আওয়ামী লীগ থেকেও। কিন্তু এত কিছুর পরও এই দুই নেতার মধ্যে থামেনি দ্বন্দ্ব। কয়েক দিন পরপর বিভিন্ন ইস্যুতে শামীম ওসমান ও আইভীর দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন।

ওই হামলায় এমপি শামীম ওসমান জড়িত বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন মেয়র আইভী। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমার সঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নয়। এটি সেলিনা হায়াৎ আইভী বনাম হকারদের।’
আইভী-শামীমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন

গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ (বুধবার) আমি দুজনকেই (আইভী-শামীম) ফোন দিয়েছি তারা যাতে শান্ত থাকে। পরস্পরবিরোধী অ্যাক্টিভিটিসে যাতে না যায়। এ মেসেজটাই আমি পৌঁছে দিয়েছি। বলেছি, তারা যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখেন এবং শান্তিরক্ষার জন্য যাতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন।’
সংঘর্ষের ঘটনায় আইনগত ও দলীয় ব্যবস্থা

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ও দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাদের বলেন, ‘দুজনকেই (আইভী ও শামীম ওসমান) ফোন করেছি। যেন এই ঘটনা বন্ধ করা হয়। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার তদন্ত চলছে, যারাই জনসমক্ষে দলের ভাবমূর্তি সংঘর্ষের মাধ্যমে নষ্ট করেছে, যারাই দোষী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে-ই অপরাধী হোক, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইভী-শামীমের মধ্যে ‘বেশি মাত্রায় মারামারি হয়েছে’
গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুজনই (আইভী-শামীম) আওয়ামী লীগের। দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বও দীর্ঘদিনের। আপনারা দুজন যদি মারামারি করতে চান, আমাদের কাছে যদি বিচার না আসে, আমরা অ্যাডভান্স গিয়ে কীভাবে করতে পারি। দুজনই নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমাদের দলেরই। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মারামারি হবে, এটা একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেছে।’

‘হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা’
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) যে হামলা হয়েছে, সেটা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। আমার নিকটাত্মীয় ভাই, ভাগ্নে ও ভগ্নিপতিসহ কাছের নেতাকর্মীদের মুখ দেখে দেখে হামলা করা হয়েছে। ইটবৃষ্টি ঝড়ানো হয়েছে। আমি এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অস্ত্রধারীর পক্ষে শামীম ওসমানের সাফাই

মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় নারায়ণঞ্জের সাবেক যুবলীগ নেতা ও শামীম ওসমানের সমর্থক নিয়াজুল ইসলামকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। পরে তিনি ব্যাপক মারধরের শিকার হন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘নিয়াজুল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নিয়াজুল একা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রথমে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। পরে আত্মরক্ষার্থে সে তার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছে। কিন্তু সে কোনো গুলি করেনি। তারপরও সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে তার পিস্তল কেড়ে নেয়। তাকে ধরে নিয়ে একাধিকবার মারা হয়েছে। আমি যা বলব, প্রমাণ নিয়েই বলব।’

অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ হামলাকারীদের শাস্তি দাবি
সংঘর্ষ চলার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হামলার সময় সাংবাদিকদের ওপর অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলামসহ দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করা হয়। এ জন্য প্রশাসনকে আগামী ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ফুটপাথে হকার বসার অনুমতি
হকার ইস্যু নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার একদিন পর নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে মেট্রো সিনেমা হল চত্বর পর্যন্ত বসার অনুমতি পেয়েছে হকাররা। মেয়র আইভী ও এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে আলোচনার পর হকারদের বসার এ অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক মো. রাব্বী মিয়া। গতকাল বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ডেকে নিয়ে বৈঠকের পর এ অনুমতি দেওয়া হয়। এদিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে হকারদের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন শামীম ওসমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *