শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, বুধবার,২১মার্চ ২০১৮:
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত এসএম মাহমুদুর রহমান রিমনের (৩২) লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়ায় তার বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স যখন বাড়িতে এসে পৌঁছে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ফ্রিজিং গাড়িটি আসা মাত্রই সন্তানকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে যায় রিমনের মা লিলি বেগম। গাড়ির কাছে গিয়ে আছড়ে পড়েছিলেন বুকফাটা কান্নায়। বারবার অচেতন হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই স্বজনদের বুকে মাথা রেখে শুধু বিলাপ করছিলেন।
মা আশা করেছিলেন, আদরের সন্তান বাড়িতে এসে হয়তো বলবে ‘মা, মাগো তুমি কোথায়, আমি এসেছি, খেতে দাও।’ ছেলে তার উঠানে এসেছি ঠিকি, তবে কফিনে লাশ হয়ে। রিমন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামের শাহ মো. মশিউর রহমান নিরু মিয়া ও লিলি বেগমের বড় ছেলে। রিমনের অকালমৃত্যুতে শোকে পাগল হয়ে শুধুই বিলাপ করছিলেন বাবা নিরু মিয়া ও মা লিলি বিগম।
মা লিলি বেগম কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘তোরে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচব-রে বাজান। আল্লাহ আমাগো আগে তোরে কেন নিয়া গেল। কি পাপ করছিলাম আমরা। তুই এইভাবে আমাগো ফেলাইয়া থুইয়া চইলা যাইস না। একবার আমারে মা কইয়া ডাক দেরে বাজান, আমার বুকে আয়।’
রিমনের মায়ের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। রিমনের লাশ দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষগুলোও যেন বাকরুদ্ধ। রিমনের বাবা নিরু মিয়া ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। অসুস্থ শরীর নিয়ে তেমন চলতেও পারেন না। তিনি সন্তানের কফিনের চারপাশে ঘুরছেন আর শুধু পাগলের মতো বিলাপ করছেন। রিমনের একমাত্র ছোট ভাই রূপম হোসেন বড় ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার মুখে নেই কোনো ভাষা। শুধু চোখ দিয়ে ঝরছে অশ্রু।
রিমনের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে। তার ফ্যালফ্যাল চাহনি ও কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। বাকরুদ্ধ ঝর্ণা সারাদিন কোনো খাবার খাননি, কারো কোনো কথার জবাবও দেননি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া, নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা শুভ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামান শাহিন যান নিহত রিমনের বাড়িতে। রিমনের বাবা, মা, স্ত্রীকে সমবেদনা জানান। জেলা প্রশাসক আর্থিক সহায়তা হিসেবে তাদের হাতে তুলে দেন নগদ এক লাখ টাকা।
সকাল ১০টায় লস্করদিয়া স্কুল মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ইমাম ছিলেন লস্করদিয়া মিয়াবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. কামরুজ্জামান। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে রিমনের লাশ দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে ৭১ আরোহী নিয়ে গত ১২ মার্চ দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এতে বিমানের ৫১ আরোহী নিহত হন। উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। এদের ২৬ জনই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।