বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
ডাঃ ইসমত কবীর, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, যুক্তরাজ্য : অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাড়া জাগানো ভ্যাক্সিন এর প্রথম/দ্বিতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর বিস্তারিত গবেষণার ফল আজ প্রকাশিত হয়েছে।
আঠার থেকে পঞ্চান্ন বছরের সুস্থদেহের ১০৭৭ জন স্বেচ্ছাসেবী অন্তভূর্ক্ত ছিলেন এ ট্রায়ালে (সময় কাল ২৩ এপ্রিল, ২০২০ থেকে ২১ মে, ২০২০) অংশগ্রহনকারীদের গড় বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রায় নব্বই শতাংশ ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। মহিলা-পুরুষ ছিলেন মোটামুটি সমসংখ্যক।
দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫৪৩ জন পেয়েছিলেন নীরিক্ষাধীন ChaAdOx1 nCoV-19 টীকা আর ৫৩৪ জন পেয়েছেন মেনিনজাইটিস এর প্রচলিত টীকা MenACWY.
যুক্তরাজ্যের পাঁচটি বিভিন্ন কেন্দ্রে এ ট্রায়াল চালানো হয়।
এ ট্রায়ালের বিষয়বস্তু ছিল টীকাটি নিরাপদ কিনা তা দেখা, টীকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো নির্ণয় করা আর কার্যকারিতা প্রমাণ করা।
লক্ষ্যণীয় প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে ছিল
(১) মাথাব্যথা, শারিরীক দুর্বলতা (Headache, Fatigue)
(২) মাংসপেশীর ব্যথা ( Muscle Ache)
(৩] শারিরীক অবসাদ (Malaise)
(৪) জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব (Fever, Feverish feeling)
টীকা দেওয়ার প্রথম দিনেই এগুলো দেখা দিয়েছে, এগুলোর কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, নিজে থেকেই সেরে গিয়েছে।
যারা টীকা দেওয়ার আগে প্যারাসিটামল খেয়েছিলেন তাঁদের বেলা এর তীব্রতা ছিল কম।
কারো মাঝে কোন মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়নি।
ল্যাব পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া ছিল কারো কারো রক্তের মামুলি স্বল্পস্থায়ী নিউট্রোপেনিয়া।
নীরিক্ষাধীন টীকা আর মেনিনজাইটিস টীকা প্রাপ্ত দুই গ্রুপের মধ্যেই এ প্রতিক্রিয়াগুলো পাওয়া গেছে যদিও প্রথম গ্রুপে এ সংখ্যাটা ছিল একটু বেশি।
টীকা দেওয়ার আটাশ দিনের মাথায় সর্বোচ্চ পরিমাণে স্পাইক প্রোটিনরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় আর এ পরিমাণ ছাপ্পান্ন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দশজন স্বেচ্ছাসেবীকে আটাশ দিনের মাথায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে তাঁদের শরীরে এন্টিবডির পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।
টীকা দেওয়ার সাতদিনের মধ্যে কোষনির্ভর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চোদ্দ দিনের মধ্যে এ প্রতিরোধ ক্ষমতা (টি সেল রেসপন্স) চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং ছাপ্পান্নো দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।
প্রায় একশ ভাগ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরেই প্রমাণ মিলেছে দুই ধরণের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি হওয়ার।
(এরি মধ্যে অন্যসব গবেষণা প্রমাণ করেছে কোভিড১৯ এর ক্ষেত্রে টি-সেল নির্ভর সেলুলার ইমিউনিটি বা কোষ নির্ভর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।)
এ গবেষণাটি প্রমাণ করেছে এজেডটি ১২২২ ( ChAdOx1 nCoV-19) টীকাটি নিরাপদ ও কার্যকর।
এ পর্বে বয়স্কদের (>৫৫) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তেমনি বাদ পড়েছেন আনুষাঙ্গিক রোগে ভুগছেন এমন সব ব্যক্তি যাঁদের কোভিড১৯ এর ঝুঁকি অনেক বেশি। অশ্বেতাঙ্গদের সংখ্যাও ছিল অনেক কম।
ইতোমধ্যে তৃতীয় পর্বের সূচনা হয়েছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে।
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আস্ট্রাজেনেকা জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যাতে সেপ্টেম্বর এর মধ্যেই এ টীকার বিপণন নিশ্চিত হয়।
উল্লেখ্য এ গবেষণার পীঠস্থান হচ্ছে এডওয়ার্ড জেনার এর নামে প্রতিষ্ঠিত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইন্সটিটিউট। ১৭৯৬ সালে জেনার সাহেব গুটি বসন্তের টীকা আবিষ্কার করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এ জুলাই মাসেই।
লেখক : জেরিয়াট্রিক ও জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজিস্ট্রার, কুইন এলিজাবেথ দা কুইন মাদার হসপিটাল, মারগেট, কেন্ট, যুক্তরাজ্য।