শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনে চাই কৃষিবান্ধব পদক্ষেপ ও খাদ্য অধিকার আইনের দাবিতে স্মারকলিপি

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৫ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন
ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনে চাই কৃষিবান্ধব পদক্ষেপ ও খাদ্য অধিকার আইনের দাবিতে স্মারকলিপি

প্রতিনিধি, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, চট্রগ্রাম : বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এ বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-ঋঅঙ এর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯’ উদযাপনের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এসডিজির ২ নং লক্ষ্য ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা’র বিষয়কে যুক্ত করা হয়েছে।

দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের হার কমেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লক্ষ। যার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ এবং এদের মধ্যে অতিদরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দারিদ্র্যের হার কমলেও সংখ্যাগত দিক থেকে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা খুব বেশি কমেনি। দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরি খাদ্য কিনতে পারে না এমন জনগোষ্ঠী অতিদরিদ্র এবং দৈনিক ২ হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য কিনতে পারে না এমন মানুষ দরিদ্র। এ সকল জনগোষ্ঠী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পায় না।

দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য, অর্থাৎ মধ্য আয়ের দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সকল দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ভারত, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশের একাংশ আইন/নীতির মাধ্যমে সকল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিগত ৩০ মে ২০১৫ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন’-এর উদ্বোধনী বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরো সমুন্নত করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের অঙ্গীকার করেছিলেন। আগামি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ ও ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ, এসডিজির ১নং লক্ষ্য ‘দারিদ্র্যের অবসান’ এবং ২নং লক্ষ্য ‘ক্ষুধামুক্তি’সহ সকল লক্ষ্য অর্জনে অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন করে অতিদরিদ্র ও দরিদ্রদের খাদ্য অধিকার কার্যকর করা এবং সে অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে অতিদরিদ্রদের অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যায়ক্রমে সকল দরিদ্র মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। ১৬ অক্টোবর ২০১৯ইং বিশ্ব খাদ্য দিবস উদাযপন উপলক্ষে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-চট্টগ্রাম, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), আইএসডিই বাংলাাদেশ ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার আয়োজনে জনজমায়েত, আলোচনা শেষে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান কালে উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেনকে স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী ও ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, কামাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খালেদ খান চৌধুরী, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব হালিশহরের এমদাদুল হক সৈকত, নার্গিস আকতার নীরা, সুফিয়া কামাল ফেলো জান্নাতুল ফেরদৌস, ভেজিটেবল এক্সপোর্টারস অ্যসোসিয়েশনের মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদ মোঃ মুহাম্মদ জানে আলম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগের সেলিম সাজ্জাদ, হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব জামাল খানের সভাপতি সালাহউদ্দীন, সাধারন সম্পাদক নবুয়ত আরা সিদ্দিকী, যুগ্ন সম্পাদক হেলাল চৌধুরী, মানবাধিকার কমিশনের খুলসীর সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ, ক্যাব মাঠ সমন্বয়কারী তাজমুন নাহার হামিদ প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে বলা হয় বর্তমান সরকার, বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগের কারনে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও নিরাপদ খাদ্যের বেলায় মারাত্মক হুমকিতে আছে। অন্যদিকে সরকার হতদরিদ্রের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টণীর অনেকগুলি যুগান্তারী উদ্যোগ নিলেও মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাবে এসমস্ত কর্মসুচি গুলি কাঙ্খিত লক্ষ্য পুরণে সমর্থ হচ্ছে না। বাংলাদেশের সংবিধানে সবার জন্য খাদ্য অধিকারের কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত খাদ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়নি। খাদ্য উৎপাদন ও বিপনণে বহুজাতিক কোম্পানী গুলির ক্রমাগত একছত্র আধিপত্য বিস্তার সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। আর সে কারনে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুনেরও অনেক বেশী। একদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্য মুল্য পায় না, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে দেশীয় প্রকৃত কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুনছে। সেকারনেই সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, পুষ্টি নিরাপত্তা, খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাস্ট্রকে বাধ্য করার বিষয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *