শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন

গৌরীপুরে শহীদ মিনারের সামনে তৈরী করা হচ্ছে বাগান!

মো. হুমায়ুন কবির / ৩২ পাঠক
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন

শহীদ মিনার একটি চেতনা, একটি স্বাধিকার, ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা। সেই ত্যাগ ও ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করে রাখতেই সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয় শহীদ মিনার। বাঙালি জাতির জন্য ভাষা আন্দোলন একটি গৌরবময় ইতিহাস। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের পুম্বাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয় শহীদ মিনার। যেখানে বিদ্যালয় তথা এলাকার সর্ব-সাধারণ ভাষা শহীদদের প্রতি প্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনার জন্ম দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিকে পিছনে ফেলে শ্রদ্ধানিবেদনের জায়গা না রেখেই শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের দেয়াল দিয়ে ফুলের বাগান। যা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কারন হয়ে দাঁড়াবে দেয়াল বেষ্টিত ফুলের বাগান। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে টাইলস দিয়ে বাগান নির্মাণ করলেও নেই কোন ফুল গাছের অস্তিত্ব।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা সাদিল মিয়া বলেন, শহীদ মিনারটির সামনে ফুল বাগান নির্মাণ সম্পূর্ণ একটি বেআইনি কাজ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ফুল দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ যাবতীয় জাতীয় দিবসগুলোতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়ে এসএমসি কমিটি না থাকায় এডহক কমিটির সভাপতি ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারী অর্থ ব্যবহার করে শহীদ মিনারটিকে পিছনে ফেলে অপরিকল্পিতভাবে ফুল বাগান তৈরী করছে।

স্থানীয় মঞ্জুরুল হক (২২) নামের যুবক বলেন, আমার জানামতে এমন ঘটনা কোথাও আছে বলে মনে হয়না। পূর্বে নির্মিত বাগানটিতেই লাগানো হয়নি কোন ধরণের ফুল গাছ। বর্তমানে বাগানটিকে দেখলে গোরস্থানের মত মনে হয়। আপনারাই দেখেন, বিদ্যালয়ে অনেক জায়গা আছে শহীদ মিনারকে পিছনে ফেলে বাগান নির্মান জরুরী ছিল না, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানানোর জন্য জায়গা রেখে বাগান নির্মান করার দরকার ছিল।

স্থানীয় এসএসসি পরীক্ষার্থী যুবক সাকিব আলম বলেন, এমন ঘটনা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক, রীতিমতো এটি শহীদদের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে পরিচালনা কমিটি না থাকায় এডহক কমিটির লোকজন ৪/৫ বছর যাবত উন্নয়নমূলক কোন কাজ করেনি। প্রতি বছর সরকার কর্তৃক মেরামতের যে টাকা আসে তা কার পকেটে যায় ? এ নিয়ে এলকাবাসীর মনে ক্ষোভ রয়েছে।

তৎকালীন শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সদস্য খসরু পারভেজ রাজীব জানান, এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোন রকম আলোচনা না করেই তাদের ইচ্ছামতো বাগান নির্মাণ করেছেন। অথচ শহীদ মিনারের জায়গা না রেখেই এমন নির্মাণ কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এডহক কমিটির সদস্য-সচিব আর্শেদা বেগম বলেন, ২ ফুট দূরত্ব রেখে বাগানটি তৈরী করা হচ্ছে। পূর্বের বাগানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গাছও নাই।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও এডহক কমিটির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষিকা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সিদ্ধান্তেই শহীদ মিনারের সামনে বাগান নির্মাণ করা হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন। এ ধরণের কাজ হয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ এ বিষয়ে বলেন, ২ ফুট জায়গা দিয়ে ছাত্র/ছাত্রীরা কিভাবে ফুল দিবে? শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নূন্যতম জায়গা রেখে বাগান নির্মাণ করা উচিত। যদি তা না করা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *