শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে বন্যায় মৃত বেড়ে ১৮, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থানচি

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৬৪ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় আরও দুই মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮তে। এদিকে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সেখানে ব্যাপক আকারে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া টানা বর্ষণে বান্দরবান-থানচি সড়কের কয়েকটি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে থানচি উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দৈনিক বাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব খবর জানা গেছে।

সাতকানিয়ার চরতি ও লারফলা থেকে শুক্রবার দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার দুজনের মধ্যে একজনের নাম সানজিদা (৪), তবে অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, পৃথক স্থান থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত সোমবার রাত থেকে কার্যত পানির নিচে চলে যায় চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল। পরদিন বিকেল পর্যন্ত পানি বেড়ে তলিয়ে যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলা। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতকানিয়া উপজেলা। এই উপজেলার সবটিই পানির নিচে ছিল অন্তত ৩০ ঘণ্টা। সোমবার রাত থেকে বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সাতকানিয়া-বান্দরবান সড়কও তলিয়ে যায় পানিতে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন থাকায় বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্কও। এতে যোগাযোগব্যবস্থায় ধস নামে পুরো অঞ্চলে। নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছুটতে থাকেন বন্যাদুর্গতরা। এতে অনেকে তলিয়ে যান পানির স্রোতে। মঙ্গলবার থেকে তলিয়ে যাওয়াদের মরদেহ ভেসে উঠতে থাকে।

চকরিয়ায় ব্যাপক নদীভাঙন:
চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় ব্যাপক আকারে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যা ও ভাঙনের ফলে চকরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লাখের বেশি মানুষ। চকরিয়ার পেকুয়ায় ২৫টি ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ফসলি জমি থেকে পুরোপুরি বন্যার পানি নেমে গেলে সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা যাবে।

সাহারবিলের কৃষক গিয়াসউদ্দিন জানান, তার পাঁচ বিঘা জমির আমন ধান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, পানি কমতে শুরু করায় নদীভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। অনেক ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসাইন জানান, বন্যায় চকরিয়া উপজেলার ১ হাজার ১৬০ হেক্টর আউশ ধান, ৭ হাজার ২৮ হেক্টর আমন ধান, আমন ধানের বীজতলা ৫৮৫ হেক্টর, শাকসবজি ৮১২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অফিস জানিয়েছি। কোনো ধরনের সহযোগিতা এলেই কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ দিয়ে জরুরি মেরামতের কাজ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থানচি:
টানা বর্ষণে বান্দরবান-থানচি সড়কের কয়েকটি স্থানের কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে থানচি উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হয়েছে সরকারি আশ্রয়শিবির থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হলে ও বান্দরবান-থানচি সড়কের প্রায় তিন-চার কিলোমিটার রাস্তায় কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। থানচি-আলীকদম উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অংম্পুং ম্রো পাড়া স্থানে পাহাড় থেকে বিশালাকার পাথর ধসে পড়ে যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ সুজন মিয়া বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। সড়কটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাই সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে থানচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবুল মনসুর বলেন, ‘সংস্কারের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেকোনো দুর্যোগে মোকাবিলা ও সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও থানা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যায় পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেলেও মানুষ হতাহত হননি। তবে জুম, ধানের জমি, ফলদ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *