শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

ডিজিটাল সুরক্ষা আইন: ক্ষতিটাই বেশি

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ২৭ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮: ‘আমার ১৪ বছরের জেল হচ্ছে। একই সাথে ২০ লাখ টাকা জরিমানা। কারণ আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ছবি ভিডিও করার চেষ্টা করেছিলাম। সেই কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮- এ। উপরের এই অংশটুকু আসলেই সত্য হতে পারে যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন হয়।’

নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমনই অভিমত তুলে ধরেছেন গণমাধ্যম কর্মী চৌধুরী আকবর হোসেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তার মতো দল-মতনির্বিশেষে অধিকাংশ গণমাধ্যম কর্মীই এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন ডিজিটাল মাধ্যমে।

একই প্রসঙ্গ তুলে সমকালের সাংবাদিক রাশেদ মেহেদী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আসছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিরোধী ভয়ংকর কালো আইন ৩২ ধারা। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।’…আমার রিপোর্টের কারণে প্রকল্পে দুর্নীতির আয়োজনে সমস্যায় পড়লে কয়েক মাস আগে এক মহাক্ষমতাধর রোমান্টিক সচিব আমাকে বলেছিলেন, আপনারা মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে রিপোর্ট করবেন, এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া আইনে সেই সচিব মহোদয়ের কথার প্রতিফলন পেলাম….এ আইনের ফলে সচিব সাহেবদের প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি সহজ হবে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে…..প্রচণ্ড মাত্রায় বিস্মিত হই যখন দেখি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাইবার স্পেসে ব্যাংক, বীমার একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ চুরি করলে সাজা মাত্র পাঁচ বছর জেল এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা! আইন কার জন্য? অপরাধীর জন্য, না অপরাধ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য?’।

এভাবেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি খোদ ডিজিটাল মাধ্যমেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ‘এই আইন স্বাধীন গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরার একটা ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তার ভাষায়, ‘সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অন্যায় করবে- কেউ এ তথ্য নিতে পারবে না- এমন ব্যবস্থা গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টার শামিল। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে ইনডেমনিটি দেওয়া হল।’

গণমাধ্যম কর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের পাশাপাশি আইনটির সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন প্রযুক্তিবিদরাও।

এই খসড়া নিয়ে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাজিম মাশরুর বলেছেন, আলোচিত ৩২ ধারাটি রষ্ট্রের সুরক্ষাকেই দুর্বল করবে। তথ্যের সুরক্ষার চেয়ে রাষ্ট্রের সুরক্ষায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে সহায়তা করে। এই আইন সেই জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রকারন্তরে বড় বড় দুর্নীতি উদঘাটনের সুযোগ কমবে।’

তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির সুরক্ষায় এই আইন এটা প্রবিধান করা সম্ভব নয়। এটি আইনের অপপ্রোয়েগের ক্ষেত্রকে আরও উস্কে দেবে। একজনের দায় অন্যের কাঁধে চলে আসার ঝুঁকি বাড়বে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ৫৭ ধারার চেয়ে ৩২ ধারা আইনটিকে আরও কঠোর করেছে। লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। এই আইনের ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হয়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, আইন দিয়ে সুরক্ষা দেয়া যায় না। সুরক্ষা দিতে হয় প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল দিয়ে। ডিজিটাল অপরাধের এভিডেন্স সংগ্রহ, সনাক্তকরণ এবং এই অপরাধের বিচার করার সক্ষমতা অর্জনই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।

সুমন বলেন, মুঠোফোন কিংবা পিসি যাই ব্যবহার করেন না কেন অপরাধের ধরন একই আছে। কেবল মাধ্যম পরিবর্তন হয়েছে। তাই এর জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে অপপ্রোয়োগের পথকে প্রসারিতকরণ বলেই মনে হয়।

বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি আরাফাত সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের নামে নতুন যে আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা ৫৭ ধারার থেকেও খারাপ হয়েছে।’

তিনি বলেন, বিশেষ করে ৩২ ধারায় যা বলা হয়েছে তাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ আইন বলবৎ থাকলে তথ্য যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ থাকবে না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাও করা যাবে না।

এছাড়া এ আইনের শাস্তির বিষয়টিও অসমাঞ্জস্য রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এ সাংবাদিক নেতা।

৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে যে আইন আসছে তাতে আলসার নাম পরিবর্তন করে ক্যান্সার নামকরণ করার মতো হয়েছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না, বলেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *